1. mdjoy.jnu@gmail.com : admin : Shah Zoy
  2. satvsunamgonj@gmail.com : Admin. :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
  •                          

হাওরাঞ্চলের কথা ইপেপার

ব্রেকিং নিউজ
সিলেট পাবলিক প্রসিকিউটরদের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন সিলেটের চাঞ্চল্যকর দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার কম্পিউটার অপারেটর অমিত হত্যায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নতুন চেয়ারম্যান সুনামগঞ্জের অধ্যাপক ডা.উবায়দুল কবীর বিয়ানীবাজার এসোসিয়েশন ইতালি নাপলীর কার্যকরী কমিটি ঘোষণা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নানান অনিয়ম দুনীতির মামলাটি তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত উত্তরপূর্ব পত্রিকার মেকআপম্যান অমিতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডরস গ্রুপ গোলাপগঞ্জ শাখার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত সিলেটের গোলাপগঞ্জে ইউপি সদস্যের হামলায় আব্দুল মালিক নামের এক কৃষক আহত, জোরপুর্ক জমি দখলের পায়তারা কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে হবিগঞ্জ থেকে হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত হওয়ায় সিলেট পুলিশ সুপারকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সংবর্ধনা

সিলেটে কাটছে টিলা গড়ে উঠছে দালান বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ—প্রশাসন নির্বিকার

Reporter Name
  • আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি:
সিলেট নগরীতে কাটছে টিলা, উঠছে বহুতল বিশিষ্ট দালান, পাকাবাড়ী, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, আইনশৃংখলা বাহিনীসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কাটা হচ্ছে টিলা ছোট পাহাড়, ভরাট করছে পুকুর, অবাধে বিক্রি করছে টিলার মাটি এবং ভুমি প্রশাসনের কর্মকতার্—কর্মচারীরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভুমির শ্রেনী পরিবর্তন করছেন। খাস জমির পাশাপাশি বাগানের জমিগুলোও জবর দখলের মাধ্যমে গড়ে উঠছে বসতি। সিলেট নগরীতে দিন কিংবা রাতে কাটছে এসব পাহার টিলা। ছোট—বড় টিলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সিলেট নগরী কিন্তু গেল কয়েক দশকে বহু টিলা কেটে সমতল ভুমিতে পরিনত করে তৈরী করা হয়েছে রাজ প্রসাদ। এই টিলা কাটার সাথে জড়িত স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, পরিবেশের অসৎ কর্মচারী, জেলা প্রশাসনের অসৎ কর্মচারীরা। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে, জীব—বৈচিত্র ধ্বংস করে এসব জায়গায় তৈরী করা হয়েছে আবাসিক এলাকা, গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক ভবন পরিবেশবাদীদের অভিযোগ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জানিয়েছেন, ১৯৫৬ সালে ভূমির মাঠ জরিপের তথ্যে সিলেটের ছয় উপজেলায় ১ হাজার ২৫টি টিলার অস্তিত্ব ছিল। তার বাইরে আরও তিনটি উপজেলায় বেশ কিছু টিলা ছিল। ইতিমধ্যে অন্তত ১০০টি টিলা পুরোপুরি কিংবা আংশিক ধ্বংশ করা হয়েছে।

১ হাজার ২৫টি টিলার মধ্যে নগর ও উপকণ্ঠ মিলিয়ে সিলেট সদর উপজেলায় টিলার সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। তার বাইরে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৪১৩টি, বিয়ানীবাজারে ২৭০টি, জৈন্তাপুরে ৯৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৪টি ও কোম্পানীগঞ্জে ১ টিলা ছিল।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ২৫১ দশমিক ৮ একর টিলা শ্রেণির ভূমি এবং দক্ষিণ সুরমা ও কানাইঘাট উপজেলায়ও কিছু টিলার কথা এসেছিল জরিপে।

তবে সিলেটে কী পরিমাণ টিলা ছিল, কি পরিমান টিলা ইতিমধ্যে ধ্বংশ করা হয়েছে আর কতটা টিলা এখনও অক্ষত আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, “কি পরিমাণ টিলা রয়েছে সে হিসাব ভূমি অফিসের কাছে আছে। টিলা কাটা বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করছি। টিলা কাটা বন্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে।
পরিবেশ আন্দোলনের কমীর্রা জানান, সবচেয়ে বেশি টিলা উজাড় হয়েছে নগরী ও উপকণ্ঠে। আইনের ফাঁক দিয়েই টিলা কাটা হচ্ছে। সিলেট নগরীর টিলায় টিলায় আবাসন গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫—এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।
সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান জানান, “২০০০ সালে জরিপে সিলেট অঞ্চলের ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক টিলার শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেউ চাইলে বেচাকেনা করতে পারেন। অনেকে টিলাকে ‘টিলা বাড়ি’ হিসেবে রের্কড করেছেন।”
এভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করেই এসব টিলা কাটা হয়েছে বলে বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার জানিয়েছেন।
আবাসন ব্যবসার প্রসার:
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজারের বেশি, যা ২০১১ সালে ৪ লাখ ৭৯ হাজারের মত ছিল। জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তত বেশি আবাসনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট নগরীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্র। এই চক্রের সাথে সরকার দলীয় নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের নেতারাও জড়িত হয়ে আবাসন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট নগরীতে যেসব টিলা উজার হয়েছে তার অধিকাংশ স্থানেই আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিলা কেটে সরকারি স্থাপনাও করা হয়েছে।
যুগ যুগ ধরে ভূমি কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়, সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে এসব টিলা কাটা হয়েছে বলেও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ।
গেল দুই দশকে নগরীর আখালিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, করের পাড়া, গ্রিনসিটি, দুসকি, জাহাঙ্গীর নগর, বালুচর, বড়গুল, গুচ্ছগ্রাম, বহর কলোনী, আলবারাকা এলাকায় টিলা কেটে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সবশেষ নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাওলদারপাড়ার ‘মজুমদার টিলা’ কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শান্তিনিকেতন’ আবাসিক এলাকা।সিলেট নগরীর টিলায় টিলায় আবাসনের থাবা:
সরেজমিনে নগরীর কালীবাড়ি এলাকার হাওলাদারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মজুমদার টিলা নামে পরিচিত টিলাটির চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে বড়—বড় স্থাপনা। টিলা কেটে গড়ে তোলা পাড়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘শান্তি নিকেতন আবাসিক এলাকা’। শাহপরান থানাধীন বহর কলোনী এলাকাও পাহাড় কেটে সরকারী খাস জায়গায় গড়ে উঠেছে আল বারাকা আবাসিক এলাকা। বাহুবল আবাসিক এলাকাতেও দেখা যায়, প্রকাশ্যে দিন দুপুরে একজন সিনিয়র আইনজীবীর নির্দেশে পাহাড় কেটে গাছ ও মাটি সরানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ জানান, আমি আদালতের অনুমতির জন্য আবেদন করেছি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেছি। আমি পাহাড় কাটছি না । বর্তমান জরিপে আমার জায়গায় পাহাড় নেই আছে বাড়ী রকম ভুমি।
মজুমদার টিলার বেশিরভাগ অংশ কাটা হয়ে গেছে। টিলাটির মধ্যখানের অংশটিও কাটা হচ্ছে সুকৌশলে। বাসাবাড়ি নির্মাণ কাজও চলছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নগরীর সবচেয়ে বড় টিলা ছিল ‘মজুমদার টিলা’। এটি প্লট আকারে বিক্রি করা হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। তারপর থেকেই নীরবে চলছে টিলার মাটি কাটা। টিলার চারপাশে বাসাবাড়ি ছাড়াও দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। টিলাটি যেন কাটা না হয় এ জন্য পরিবেশবাদীরা অনেক আন্দোলন করেছে, দৌড়ঝাঁপ করেছে, সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। তিনি জানান, “এর কারণ মূলত পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্লিপ্ততা। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতাই সিলেট বিভাগের পাহাড় টিলা ধ্বংসের অন্যতম কারণ। হাওলাদার পাড়ার বিভিন্ন টিলা কাটার সময় পরিবেশ কর্মীদের চাপে লোক দেখানো জরিমানার ঘোষণা দিলেও টিলাকাটা বন্ধ হয়নি। একই টিলায় একাধিকবার জরিমানা করার নাটকও করা হয়েছে।

“এই টিলা খেকোদের মধ্যে স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কেহ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। স্থানীয় মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ না থাকায় টিলাখেকোরা আরও বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাহাড় টিলা রক্ষা করতে হলে স্থানীয় মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন পাশাপাশি সরকারকেও গুরুত্ব দিতে হবে।”

‘মজুমদার টিলা’র মালিক সুব্রত মজুমদার সুইডেন প্রবাসী। তার হয়ে টিলার প্লট ক্রয়—বিক্রয়ের কাজটি করেছেন কয়েকজন প্রতাবশালী ব্যক্তি। টিলাটির অধিকাংশ প্লট কিনেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা, ব্যাংকার ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা। তবে যারা প্লট কিনেছেন বা ভবন তৈরি করেছেন, তাদের কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

কয়েকজন বাসিন্দা জানান, যখন টিলা প্লট আকারে বিক্রি করা হয়, তখনই তাদেরকে বলা হয়েছে, টিলার মাটি সরিয়ে ভবন তৈরি করার মত অবস্থা করে দেয়া হবে। এ ছাড়া টিলা কাটার কিছু লোক আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সবকিছু হয়ে যায়। অনেকেই টিলার মাটি বিক্রি করে থাকেন। নতুবা মালিকপক্ষ তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির জানান, “মজুমদার টিলা এলাকায় শান্তি নগর নামে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। নগরীর পাহাড়—টিলাগুলো কেটে প্রাণীকূল ধ্বংস করা হচ্ছে। পাহাড় টিলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি ঠিকমত কাজ করতেন তাহলে এটা হত না। চারপাশে টিলা ও সবুজের নগরীতে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে সিলেটকে ন্যাড়া করে দেয়া হচ্ছে । আন্দোলন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না; কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, নগরীর কালীবাড়ি, হাওলদারপাড়া, ব্রাহ্মণশাসন এলাকার একাধিক স্থায়ী বাসিন্দার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্ষাকালটা তাদের জন্যে আতঙ্কের সময়।
ব্রাহ্মণশাসন এলাকার পঞ্চাশোর্ধ একজন বাসিন্দা জানান, “বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় টিলা কাটার মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত ধরে চলে, ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাটি কাটা বন্ধ করে চলে যান শ্রমিকেরা। রাতেই ট্রাকে মাটিগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। এ মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে সিলেট নগর ও শহরতলির নতুন বাসাবাড়ি নির্মান কাজে।

হাওলাদারপাড়ায় দেখা যায়, প্রায় ১০ একরের মজুমদার টিলার অর্ধেকের বেশি ভাগই কেটে মাটি বিক্রি করা হয়ে গেছে। কাটা অংশে তোলা হয়েছে নতুন নতুন বাসাবাড়ি।

সিলেট নগরীর টিলায় টিলায় আবাসনের থাবা: ওই এলাকার একজন জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে বাইরে দিয়ে টিনের বেড়া লাগিয়ে ভিতরে ভিতরে চলে মাটি কাটা। আবার কখনো কখনো দেখা যায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে মাটি কাটছেন শ্রমিকরা। যাতে বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে টিলা কাটা হচ্ছে। অনেকটা চুপিসারেই কাটা হচ্ছে বেশীর ভাগ এলাকার টিলা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, “টিলা কাটা বন্ধে আমরা গত দুই বছরে ১০০টি অভিযান পরিচালনা করেছি। দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। টিলা খেকোদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
জরিমানা কিংবা মামলা করেও প্রভাবশালীদের টিলা কাটা থেকে বিরত করা যায়নি বলে পরিবেশ আন্দোলনের একজন সংগঠক মন্তব্য করেছেন। তিনি মহানগরীর মধ্যে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী চা—বাগানের কথা উল্লেখ করেন। সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন চা বাগান। এই বাগানের মধ্যে অনেকগুলো টিলা রয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ মার্চ এসব কাটা টিলার ছবি তোলার সময় পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও সাংবাদিকদের কয়েকজনকে আটক করে বাগান কর্তৃপক্ষ। যদিও পরে তাদের ছেড়ে দেয়। সে সময় টিলা কাটার প্রমাণ দেখে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দিয়েছিল। টিলা কাটার দায়ে চা—বাগান কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড অ্যানফোর্সমেন্ট উইং ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল।

পরিবেশ আন্দোলনের এই সংগঠক জানান, “ওই পর্যন্তই। এর পরেও ওই বাগানের আরও টিলা কাটা হয়েছে। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে যা হয়, এখানেও তাই হচ্ছে।”

বড়গুল এলাকার বাসিন্দা; যিনি আবাসিক এলাকার মধ্যেই ছোটখাট ব্যবসা করে আসছেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তিনি জানান,এলাকায় বেশ কয়েকটি টিলা দীর্ঘদিন ধরে কাটা হচ্ছে। এসব টিলা কেটে অনেকে জায়গা বিক্রি করা হয়েছে। মাঝখানে কেউ কেউ আবার টিলার মাটি ক্রয়—বিক্রয়ের ঠিকাদারি করে আসছেন। এভাবেই কাটা হচ্ছে টিলা।
নগরীর জাহাঙ্গীরনগর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, “আমাদের এলাকার টিলাগুলো কেটে অনেক বাসা—বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। এ ছাড়া চা বাগানের টিলাগুলোতেও বাসাবাড়ি নির্মাণ চলছে।”

পাহাড় কাটলে বিরূপ হয় পরিবেশ:
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ জানান, “পাহাড় যদি আমি কাটি তাহলে পাহাড়টার স্থিরতা নষ্ট হল। সেই ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের সময়ই পাহাড় ধ্বস হবে, ভূমি ধ্বস হবে। এতে পাহাড়ের নিচে যারা বসবাস করছে তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভূ—প্রাকৃতিক দিক দিয়ে পাহাড় কাটার সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক নেই। তবে পরিবেশগত দিকে দিয়ে সম্পর্ক রয়েছে। তাই পাহাড় কাটা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, পাহাড় হচ্ছে একেকটি পানির সংরক্ষক (রিজার্ভার)। যখন বৃষ্টিপাত হয়, বৃষ্টির পানিটা পাহাড় ধারণ করে রাখে। যখন বৃষ্টিপাত থাকে না তখন এই পানিটা পরিবেশের কাজে লাগে। কিন্তু পাহাড় কাটলে এই রিজার্ভারটা কমে যাবে। তখন পরিবেশে জলাবদ্ধতা হবে। দেখা দিবে বন্যা।

“পাহাড় কাটলে আরেকটি বড় সমস্যা সিলেটে হয়, সেটি হচ্ছে— বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মাটিটা শহরের কিংবা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা কমিয়ে ফেলে। ছড়াগুলো ভরে যায়। এটার কারণে জলাবদ্ধতা ও বন্যা হয়ে থাকে। তাই আমাদের সকলের অচিৎ পাহাড় কাটা বন্ধ করা এবং যারা পাহাড় কাটে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা বাহিনীতে অবহিত করা।

অধ্যাপক মুশতাক আরও জানান, সিলেটের পাহাড়গুলো পাথরের নয়, উপরের মাটিটা উর্বর। ভিতরের মাটিটা শক্ত হতে পারে। যার ফলে অনেক ফসল হচ্ছে; অনেক প্রাণি বসববাস করছে। পাহাড় কাটার ফলে এসব প্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। এতে খাদ্যশৃঙ্খলসহ পুরো জীব—বৈচিত্রের ওপর প্রভাব পড়ছে। পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

টিলা কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, “আমি কিছু দিন হলো সিলেটে যোগদান করেছি। সিলেটে টিলা কাটা বন্ধে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করা হবে। আইনগত প্রক্রিয়া মেনেই জেলা প্রশাসন পাহাড়—টিলা রক্ষায় কাজ করবে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন