বিশেষ প্রতিনিধি:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দল অংশ গ্রহন না করে নির্বাচন বর্জনের আন্দোলন সংগ্রাম করায় নৌকার প্রার্থীদের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের ৫টি আসনে সুনামগঞ্জ—১, ৫ আসনে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের লড়াই জমে উঠেছে। সুনামগঞ্জ—১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমেদ স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় এবং যাদুকাটা নদীতে বালি উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়ায় সাধারন মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কেতলি প্রতিক নিয়ে ভোটের মাঠে স্বতন্ত প্রার্থী হিসাবে লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম, দুনীর্তি, স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয় নেতাকমীর্দের অবমুল্যায়ন, খনিজ সম্পদ লুন্ঠন, জলমহাল লুটপাটে সহায়তা, জামায়াত বিএনপি’র চিহ্নিত নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, ফসল রক্ষা বাধ নির্মানে পিআইসিদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহনসহ নারী কেলেংকারীতে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গেল উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নিজের ছোটভাইকে চেয়ারম্যান মনোনিত করা। এ ছাড়াও গেল ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করাও অন্যতম কারণ বলে স্থানীয় নেতাকমীর্রা জানিয়েছেন। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার। তিনি এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্ক কম থাকায় ভোটের মাঠে বেকায়দা আছেন। সে জন্যই ঈগলের সাথে নৌকার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন ভোটাররা। সুনামগঞ্জ—৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দীর্ঘ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ছাতক দোয়ারার বেশীরভাগ রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় নাকোশ সাধারন মানুষ। তাই এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিক নিয়ে শামীম আহমদ চৌধুরী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বাকি ৩টি আসনে জাপা’র প্রার্থীরা থাকলেও নির্বাচনী মাঠে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। সুনামগঞ্জ—৪ আসনে দীর্ঘ বছর পর নৌকা প্রার্থী দেয়ায় বঞ্চিত আওয়ামীলীগ নেতাকমীর্রা নৌকার প্রার্থী ড. সাদিককে বিজয়ী করতে প্রানান্ত চেষ্টা করছেন। আর জাপা’র প্রার্থী বর্তমান এমপি এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ’র কিছু কমীর্ হঠাৎ আগুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ায় এবং গেল দু’ মেয়াদে মহাজোটের নেতাকমীর্দের অবমূল্যায়নই কাল হয়ে দাড়িয়েছে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন সুবিধাভোগীদের মূল্যায়নের কারনেই সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর আসনে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছেন জাপার প্রার্থী মিসবাহ। এ ছাড়াও এ আসনে সুরমা নদীর উত্তর পাড়ের মানুষকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা এবং দাড়ার গাও হালুয়াঘাট সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মানে ব্যর্থ হওয়ায় জাপার প্রার্থীর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে অনেকের অভিমত। সিলেট বিভাগের ৬টি আসনের মধ্যে সিলেট ৩,৫ ও ৬ আসনে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটার কমীর্ সমর্থকরা। সিলেট ১, ২ ও ৪ আসনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী না থাকায় খুব সহজেই নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট—৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক্টর প্রতিক নিয়ে ডা: দুলাল তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতায় আছেন বলে স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন। এই আসনে নৌকা ও ট্রাক্টরের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইছেন। এই আসনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের চেয়ে স্বতন্ত্র ট্রাক্টটর প্রতিকের ডা: দুলাল মাঠ পর্যায়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন কারণ হিসেবে ডা: দুলাল সাধারন মানুষের সাথে দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনীতি করে আসছেন এবং হাবিব হঠাৎ করে লন্ডন থেকে এসে নৌকা প্রতিক নিয়ে গেল উপ—নির্বাচনে এমপি হয়ে দলীয় নেতাকমীর্দের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বেশীরভাগ দলীয় নেতাকমীর্ ডা; দুলালের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।্ এ দিকে সিলেট—৫ (জকিগঞ্জ—কানাইঘাট) আসনে নৌকা প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক আহমদ এর সাথে কেতলি প্রতিক নিয়ে আল্লামা ফুলতলী সাহেবের পুত্র মাওলানা হুছামুদ্দিন শক্ত প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হিসাবে মাঠে অবস্থান করছেন। পিছিয়ে নেই সীমান্তিক এনজিও’র স্বত্বাধিকারী ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ আল কবির ট্রাক্টটর প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। সিলেট—৬ আসনে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতিক নিয়ে সরোয়ার আহমদ তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। তবে এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে সেলিম উদ্দিনও পিছিয়ে নেই। সিলেট—১ আসনে নৌকা প্রতিকের সাথে শক্তিশালী কোন প্রার্থী না থাকায় অতিসহজেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনি সিলেট—২ আসনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী অতিসহজে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট—৪ আসনে বর্তমান এমপি ও মন্ত্রী ইমরান আহমদ চৌধুরীর সাথে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্ধি না থাকায় তিনিও খুব সহজে বিজয়ী হবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। হবিগঞ্জ—৪ আসনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর চেয়ে স্বতন্ত্র ও যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ভোটারদের মনোযোগ বেশি আর্কষন করতে পেরেছেন।
সুনামগঞ্জ—১ আসনে ঈগল প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমেদ জানান, আমি দীর্ঘ দিন যাবৎ মাঠ পর্যায়ে দলীয় নেতাকমীর্দের জন্য কাজ করেছি। বন্যা, মহামারি করোনাতে জণগনের পাশে ছিলাম। ঐ সময় অন্যকোন প্রার্থী তাদের পাশে ছিল না। আমি মনে করি সুনামগঞ্জ—১ আসনের জণগণ আমাকে ঈগল প্রতিকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।