বিশেষ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জে বানিয়াচংয়ের নাইন মার্ডার মামলার আসামী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শাল্লার কুশিয়ারা নদীতে অবৈধভাবে চলছে ড্রেজার মেশিন। প্রতি দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারা রাত চলে ড্রেজার মেশিন। ড্রেজার মেশিনের কারণে নদীর দু’তীরে শত শত একর জমি ও মানুষের বাড়ীঘর হুমকির মুখে পড়ছে। একদিকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদীর তীর রক্ষায় বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার অন্যদিকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদীর দুপাড়ের শত শত কৃষি জমিসহ ঘরবাড়ী ও স্থাপনা। উপজেলা প্রশাসন রহস্যজনক কারণে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের মারকুলি গ্রামে গেল ১৫ দিন ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছে।
সরজমিন ঘুরে জানা যায়, ৪ আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে বানিয়াচং থানার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বানিয়াচংয়ের নাইন মার্ডারের অন্যতম আসামী দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মঞ্জু কুমার দাসের নেতৃত্বেই কুশিয়ারা নদী থেকে নদীর পাড়ের ভাঙ্গন মেরামতের নামে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা আর ক্ষতি করছে শাল্লা উপজেলার অংশে কুশিয়ারা নদীর দুই তীর। তার সাথে জড়িত রয়েছে দৌলতপুর গ্রামের মাওলানা হেদায়ত উল্লাহ, মারকুলি বাজার সংলগ্ন শাখাতি গ্রামের সোহাগ চৌধুরী, মুরাদপুর গ্রামের শাহীন, মারকুলি বাজারের মাইন উদ্দিন মেম্বার ও মনির মেম্বার, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর (টুকচানপুর) গ্রামের নুরুল আলম’এর নেৃতত্বে কোন অনুমোদন ছাড়াই সন্ধ্যা থেকে সারারাত ড্রেজার মেশিন চালিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করছে। তাদের বিরুদ্ধে কেহ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পায় না।
স্থানীয়রা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, সরকার যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নদীর তীর রক্ষায় কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন আর স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের লোকজন আইন অমান্য করে বিনা অনুমতিতে কুশিয়ারা নদী থেকে কোটি কোটি টাকার বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। শাল্লা উপজেলা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছেন। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে বালু লটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে নদীর দু’পাড় ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার পাশাপাশি শত শত একর কৃষি জমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করবেন।
৪ আগষ্টে নাইন মার্ডার মামলার আসামী ও যুবলীগের ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাসের নেতৃত্বে কুশিয়ারা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে বার বার মোবাইলে কল দিলে বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
দৌলতপুর গ্রামের মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ জানান, আমরা মান্নান এন্টারপ্রাইজের কাজ করছি। বানিয়াচং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও সার্ভেয়ারের নির্দেশে বালু উত্তোলন করছি। আমরা বর্তমানে ড্রেজিং করছি না। এলাকার স্বার্থে কাজ করতে গিয়েছিলাম। বর্তমানে আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।
ড্রেজার মালিক শাখাতি চৌধুরী বাড়ীর সোহাগ চৌধুরী জানান, আমরা ১৫দিন আগে ড্রেজার বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে নুরুল আলম ড্রেজার চালাচ্ছে। আপনারা আরও বেশী কিছু জানতে চাইলে সরাসরি ফিল্ডে আসেন।
মুরাদপুর গ্রামের শাহীন জানান, আমি এ ব্যাপারে জানিনা। আমি ড্রেজার ব্যবসার সাথে জড়িত নয়।
ড্রেজারের মালিক মুরাদপুর গ্রামের ওমর ফারুক মেম্বার জানান, মনিরের নামে ওয়ার্কওয়ার্ডার ছিল। গতকাল হিসাব খিতাব করে শেষ করে দিয়েছে। আগামীকাল কাজ শেষ করা হবে। সরকারী কাজে মাটি দিতাম। নদী ভাঙ্গনের কাজে মাটি দিতাম। বানিয়াচংয়ের এসিল্যান্ড তহশিলদার ও কানুগো এসে দেখাশুনার পর কাজ করার অনুমতি দেন। যে ছড়া থেকে মাটি কাটা হয়েছে সেটা শাল্লা ও বানিয়াচং উপজেলায় পড়ছে। প্রায় দেড় মাস মাটি কাটা হয়েছে। প্রথমে একটা পরে আরেকটা পার্টি ড্রেজার বসাইছে। নদীর পাড়ে যারা সুবিধা আছে তাদেরকে কিছু মাটি দেয়া হয়েছে।
ড্রেজারের মালিক শাল্লা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের নুরুল আলম জানান, আমার পারমিশন আছে। আসলে পারমিশন দেখাবো।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: সাইফুল ইসলাম জানান, বানিয়াচং এলাকায় তিনবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। শাল্লা উপজেলার অংশে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলণ করা হলে আমাদের কিছু করার নাই। তারপরও আমি বিষয়টি দেখছি।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন সর্ম্পকে জানতে বার বার কল দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন বিষয়ে জানান, ঠিকাদার এম এ এন্টারপ্রাইজ এর মাধ্যমে নদীর ভাঙ্গা অংশগুলো পুরণ করতেই ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্তগুলো ফিলিং করা। মাটি বিক্রি সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষের কাছে মাটি বিক্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমাদের কাজের বাইরে কোন কাজ করা হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া এর বক্তব্য জানতে বার বার কল দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ফরিদুর রহমান এর বক্তব্য জানতে বার বার কল দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।