স্টাফ রিপোর্টার:
রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই সিলেট সুনামগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সামান্য কিছু আটক করতে পারলেও ধরাছোয়ার বাইরে বেশীরভাগ চোরাচালানী পণ্য ও চোরাচালানের গডফাদাররা। চোরাচালের সাথে জড়িত মুল হুতারা কখনও ধরা পড়ছে না। ধরা পড়ছে দিনমজুর বহনকারী কিংবা পরিবহনের চালক ও হেলপাররা। তাদের ধরে কি লাভ প্রশ্ন সাধারন মানুষের। চোরাচালানের গডফাদারকে ধরতে না পারলে লোক দেখানো অভিযানের কোন মানে নাই।
প্রতিদিনই খবরের পাতায় উঠে আসছে সিলেট সীমান্তে চোরাচালানের খবর। এ নিয়ে সরকারের উর্দ্ধতন মহল থেকে আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যরাও নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে বেশীর ভাগ কর্মকতার্—কর্মচারীরা অবৈধ ভারতীয় পণ্য চোরাচালের চরম বিরোধী কিন্তু কথায় আছে বেড়ায় ঘাস খেলে গৃহস্তের কি করার আছে? তেমননি সীমান্ত রক্ষি বাংলাদেশ বোডার গার্ড—বিজিবি’র কিছু সদস্য জড়িত থাকায় সহজেই দেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য। ভারতীয় পণ্য অবাধে প্রবেশ করায় একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব অন্যদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পড়ছেন বিপাকে। তারা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বিধি মোতাবেক পণ্য আমদানী করতে গিয়ে গুনছেন লাখ লাখ লোকসান। অন্যদিকে বিজিবি’র অসাধু কিছু সদস্যের সহায়তা চোরাকারবারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বলে গেছেন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসছে ভারতীয় পণ্য। প্রতিদিনই কোন না কোন সংস্থা আটক করলেও বেশীরভাগ রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাইরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতের সাথে নানান ইস্যুতে দুদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও থেমে নেই চোরাকারবারীরা। যে কোন সময় চোরকারকারীদের কারণে ভারত থেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা দেশে প্রবেশ করতে পারে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত জুড়ে কড়া শর্তকতা থাকার নির্দেশনা দিলেও মানছে না চোরাকারবারীরা। বাংলাদেশ বর্ডারগার্ডের কিছু অসৎ সদস্যের কারনেই দেশে অবাধে প্রবেশ করতে ভারতী পণ্য। দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানী করা রসুন ও সিরামিক পন্য। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর,তাহিরপুর, মধ্যনগর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক সীমান্ত দিয়েও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য পেঁয়াজ, চিনি, মাদক, অস্ত্র, মোটরসাইকেল সামগ্রীসহ অনেক পণ্য।
গত ৩০ নভেম্বর ও ১লা ডিসেম্বর সিলেট—সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাবাজার, সংগ্রাম, সোনারহাট, প্রতাপপুর, উৎমা, মিনাটিলা, কালাসাদেক, কালাইরাগ, সোনালীচেলা এবং পাথরকোয়ারী বিওপি কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান ভারতীয় পন্যসামগ্রী,কাশ্মীরি হিজাব, থ্রী পিস, চিনি, লবন, গরুর মাংস, মদ, বাংলাদেশ হতে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ রসুন, শিং মাছ, চোরাচালানী মালামাল এবং অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী নৌকা আটক করতে সক্ষম হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ কোটি ৯০ লক্ষ ১১ হাজার ৩০০ টাকা।
সিলেট বিজিবি’র ৪৮ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকতার্দের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি’র আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। তারই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকার অভিযান পরিচালনা করে চোরাচালানী মালামাল জব্দ করা হচ্ছে। বিজিবি’র কোন সদস্য চোরাচালের সাথে জড়িত থাকার তথ্য প্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আটককৃত চোরাচালানী মালামাল সমূহের বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সিলেট পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা কঠোর অবস্থানে থাকায় প্রতিদিনই চোরাচালানী পণ্য জব্দ করা হচ্ছে এবং চোরাচালানের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। চোরচালানের সাথে কোন পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার তথ্য প্রমানাদি পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।