নিউজ ডেস্ক :: সিলেট কদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার বৃষ্টির প্রকোপ আরো বেড়েছে। মাত্র ৩ ঘন্টায় সিলেটে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
রোববার দুপুর ১২ টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত এই তিনঘন্টায়ই সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। বৃষ্টি আরো অন্তত ৫ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃষ্টিতে বাড়ছে নদনদীগুলোর পানি। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিলেটে কোথাও নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
আগের দুদিনের মতো রোববার সকাল থেকেই সিলেটে মুষলধারারে বৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সাথেসাথে বাড়তে থাকে বৃষ্টির প্রকোপ।
ভারি বৃষ্টিতে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এমনকি পানি ঢুকে যায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও।
হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনে পানি ঢুকলেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে রোগীদের যাতায়াতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
এছাড়া নগরের প্রধান সড়ক জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা এলাকার সড়ক থেকে শুরু করে মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, দাড়িয়াপাড়া, যতরপুর, উপশহর, ছড়ারপাড়, তালতলাসহ বেশ কিছু নিচু এলাকার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
উপশহর, তেররতন, শাহী ঈদগাহ, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ি, কানিশাইল, ঘাসিটুলাসহ অনেক এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়।
এরআগে জুনের মাঝামাঝিতে বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয় সিলেট নগরে। ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগড় পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাইদ আহমদ বলেন, বৃষ্টি হলেই আমরা আতংকে থাকি। কখন বাসার ভেতরে পানি ঢুকে যাবে। একটু বৃষ্টি হলেই এই সমস্যা পোহাতে হয়। এ থেকে কিছুতেইা নিস্তার মিলছে না।
নগরের তালতলা এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, জলবদ্ধতার কষ্ট তো আছেই, কিন্তু যেভবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে বন্যা হয় যায় কি না এই আতংকে আছি। গতবছরের বন্যার ক্ষতিই এখন পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
ঈদের ছুটি শেষে রোববারই প্রথম খুলেছে অফিস-আদালত। তবে অফিস খোলার প্রথমদিই বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এতে নগরের যান চলাচলও ছিলো অপেক্ষাকৃত কম।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, শনিবার সকাল ৬ থেকে রোববার সকাল ৬ পর্যন্ত সিলেটে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার ও দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ৫ দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি ও ঢলের কারনে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। তবে পানি এখন পর্যন্ত বিপদসীমার নীচে রয়েছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘হাসপাতালের পিছনের নালা উপচে হু হু করে পানি ঢুকছে। মেডিকেল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। একেকটি কক্ষে হাটুসমান পানি।’
তিনি বলেন- ‘গত বছর বন্যার সময় পানি ঢুকতে দেখে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্টরা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন তবে এবারও এমন পরিস্থিতি হতো না। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সকল ভবনে পানি আরও বাড়বে। তখন হয়তো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে।’
জলাবদ্ধতার ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, আজকে সিলেটে মাত্র তিন ঘন্টায় ১০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টি হয়েছে। এই পরিমান বৃষ্টির পানি নামতে একটু সময় লাগে। তাই সামান্য সময়ের জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছে।