হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি পইলের মাছে মেলা। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলার আয়োজন করে থাকেন আয়োজকরা। এ মেলাটি পইলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মধ্যে যোগ করে এক অনন্য আনন্দের মাত্রা। যা প্রায় দুই শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে। প্রতি বছরই এ দিনটা আসলে উৎসবে মাতেন পইলবাসি। শুধু পইলবাসি নয়, এ মেলায় দেশীয় প্রজাতির বড় বড় মাছ থেকে সিলেট, মৌলভীবাজর, সুনামগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর লোকজন এসে ভীড় জমান। রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে সোমবার সকাল পর্যন্ত।
পৌষ সংক্রান্তির এ মেলায় বোয়াল, বাগাইর, বড় আকৃতির আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির আকর্ষণীয় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এছাড়াও পুটি, চিংড়ি, কৈ, চাপিলা, চান্দা মাছ উঠে ব্যাপক হারে। মেলাটির প্রধান আকর্ষণ মাছ হলেও এতে কৃষি উপকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, ভোগপণ্য, আখ, শিশুদের খেলনাও ছিল উল্লেখযোগ্য। পইলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ এ মেলাটিকে তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য বলে ধারণা করেন। সরেজমিনে মেলায় ঘুরে দেখা যায়, দেশীয় প্রজাতির বড় বড় মাছ নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। রোববার বিকেল ৪ টা পর্যন্ত তেমন কেনা বেচা না হলেও তাদের প্রত্যাশা রাতের বেলায় বাড়বে কেনা বেচা।
মাছ বিক্রেতা রমজান আলী। প্রতি বছরই এ মেলায় বড় বড় মাছ এনে বিক্রি করে থাকেন তিনি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তিনি মেলায় নিয়ে এসেছেন প্রায় ২৫ কেজি ওজনের একটি বাগাইর। যার দাম চাচ্ছেন তিনি ৪৫ হাজার টাকা। তিনি জানান, মাছটি দিরাই নদী থেকে ধরে এখানে আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। উপযুক্ত দাম পেলে মাছটি বিক্রি করে দিবেন তিনি। মাছ বিক্রেতা মনোহর মিয়া জানান, এ মেলায় প্রচুর মাছ কেনা বেচা হয়। তাই সপ্তাহখানেক আগ থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে এখানে নিয়ে আসি বেচার জন্য। ক্রেতারা জানান, এ মেলাটি আমাদের ঐতিহ্য। এ মেলা আসলে আমাদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। পরিবার পরিজন ছাড়াও দুরের আত্মীয়স্বজনরা বাড়িতে আসে বেড়ানোর জন্য। তাই এখান থেকে মাছ কিনি আমরা। আবার কেউ কেউ বড় বড় মাছ ক্রয় করে তাদের স্বজনদের বাড়িতেও পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে পইল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোস্তফা মিয়া জানান, করোনার জন্য গত দুই বছর আমাদের ঐতিহ্যবাহি এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে এবার জমজমাট আয়োজনে মাছের মেলা বসেছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রতিবছরের ন্যয় এ বছরও মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।