তাহিরপুর ডেস্ক :: স্কুলটিতে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ও তিনটি শ্রেণি কক্ষ বিশিষ্ট একটি দুতলা ভবন রয়েছে। তবে একতলা বিল্ডিংয়ের চারটি কক্ষের মধ্যে তিনটি শ্রেণী কক্ষেই সরকারী বইয়ের গোদাম করে রাখায় হয়েছে। একারনে তিনটি ক্লাসের শতাধিক শিশুদের স্কুলে এসে এখন মেঝেতে বসে পাঠদান গ্রহণ করতে হচ্ছে।
এমনি চিত্র দেখা গেছে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উজান তাহিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৌলাই নদীর পাড়ে ও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশেই উজান তাহিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক, দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনটি শ্রেণি কক্ষ তালাবদ্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রাক প্রাথমিক ৩০, দ্বিতীয় ৫০ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা এসেই এলোমেলো ভাবে ঘুরাফেরা করছে বিদ্যালয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুতলা বিল্ডিংয়ের নিচের মেজেতে বসে আছে কিছু ছাত্র আরও কিছু ছাত্র বারান্দায়, কিছু ছাত্র মাঠে ও এদিক সেদিক এলোমেলোভাবে ঘুরাফেরা করছে। অন্যদিকে কিছু ছাত্র স্কুলের পরিতাক্ত একটি টিন সেটের ঘরে কয়েকটি ব্যাঞ্চে বসে আছে কিন্তু শিক্ষক নেই।
শিক্ষার্থীরা জানায়, শ্রেণী কক্ষে বই রাখার গোদাম করে রাখায় তালাবদ্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই আমরা স্কুলের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতে পারি না। স্যাররা আমাদের বলেছেন মেঝেতে বসতে চট বিছায়ে। আমরা মেঝেতেই বসে ক্লাস করি।
স্কুলে আসা শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি ইয়াছিম মিয়াসহ কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভের সাথে জানান, ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে দেই সকালে। তারা স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে এসে জানায়, স্কুলের মেঝেতে বসিয়ে শিক্ষকগণ পাঠ্যদান করান। এসেো তাই দেখলাম। এটা খুবেই মন্দ কাজ। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ বন্ধ করে বইয়ের গোদাম করার এমন কোনো নিয়ম আছে বলে আমার জানা নাই। এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন।
এর কারন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার গাঙ্গুলি জানান, বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণী কক্ষে সরকারী বইসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রি রাখার কারনে তালাবদ্ধ। উর্ধবতন কতৃপক্ষের নির্দেশেই রাখা হচ্ছে। আমাদের কিছু করার নেই। তবে শ্রেণিকক্ষে গোদাম করার কারনে শিক্ষার্থীদের অনেকে কষ্ট হয় ও পাঠ্যদানে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ থাকায় দুটি শ্রেণী কক্ষে কোন রকমে পাঠ্যদান চালিয়ে যাচ্ছি। এতে সঠিকভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মইনুল হক জানান, বছরের পর বছর ধরে এভাবে স্কুলের শ্রেণি কক্ষ বইয়ের গোদাম করে রাখায় পাঠ্যদানে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও পাঠ্যদানে মনোযোগী হন না।
এবিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের জানান, আমি প্রায় দিনেই ঐ বিদ্যালয়ে যাই। সেখানে কোনো শ্রেণি কক্ষের সংকট নেই। তবে বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণী কক্ষে সরকারী বই রাখা আছে তা আগামী ৬-৭ দিনের মধ্যে বই বিতরন করা শেষ হবে। আর যেগুলো থাকবে তা অন্য কোনো স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।