আ.লীগ নেতা সুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে জমি দখল, অবৈধভাবে বালু ব্যবসার অভিযোগ
কাজের কমিশন, নিয়োগ-বাণিজ্য, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি
ভুয়া রাইস মিল দেখিয়ে ধান-চালের বরাদ্দ নিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সুরুজ্জামান। আগে তিনি ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। দল ও স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘বোমা জামান’ এবং ‘বস জামান’ হিসেবে পরিচিত। ছাত্রজীবনে বোমা বানাতে পারদর্শিতার জন্যই এই পরিচিতি তাঁর।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সুবাদে সুরুজ্জামান জমি দখল, অবৈধ বালু ব্যবসা, বিভিন্ন কাজের কমিশন, নিয়োগ-বাণিজ্য, ঠিকাদারি ও ভুয়া রাইস মিল দেখিয়ে ধান-চালের বরাদ্দ নিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। একপর্যায়ে নিজের অপকর্ম ঢাকতে বের করেন একটি দৈনিক পত্রিকা। সেই সূত্রে প্রেসক্লাবের সহসভাপতি পদ বাগিয়ে নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন এই নেতা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জাসদ ছাত্রলীগ করতেন সুরুজ্জামান। বোমা তৈরিতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরব ছিলেন তিনি। এ কারণে ১৯৯৬ সালে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে তাঁর।
এরপর স্থানীয় একটি কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন। তবে নানা অভিযোগ ও কলেজের দুই পদে থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ায় চাকরিচ্যুত হন।
একপর্যায়ে যুবলীগ থেকে আওয়ামী লীগে পদ পান সুরুজ্জামান। তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল বিএডিসি বীজ ক্রয় কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের শ্রমিক ঠিকাদারি, সিংহজানী খাদ্যগুদাম, গুদামের শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ, জেলা খাদ্য অফিসে মিল না থাকলেও ভাড়া মিলের মালিক সেজে ধান-চাল বরাদ্দের নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
সুরুজ্জামানকে নিয়ে বন্দেরপাড়া গ্রামের সুজন বলেন, গত ১৬ বছর এ এলাকার মানুষ টুঁ শব্দ করতে পারেননি। তাঁর ভয়ে মসজিদেও কেউ কোনো কথা বলতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে রেলের জমি ইজারা নিয়ে ৪ পুকুর, বিএডিসির প্রায় ২ একর জমিতে পুকুর ও ছোট অফিসঘর নির্মাণ করেন সুরুজ্জামান। সরেজমিনেও রেলের জায়গায় গোডাউন থাকার বিষয়টি দেখা গেছে।
শহরের মাল গুদাম রোডে সুরুজ্জামান একটি জমি জবরদখল করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতা মুকছেদুর রহমান হারুন। হারুন বলেন, ‘আমরা জমির মালিকদের কাছ থেকে কিনেছিলাম; জামান সেই জমি দখল করে রেখেছেন।’
জামালপুরে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম খান সজীব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে দফায় দফায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে; যার নেতৃত্বে ছিলেন জামান। ৫ আগস্টের পর জামান আত্মগোপনে আছেন।
জামালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তারিক মালেক সিজার বলেন, ‘জামান একটি নোংরা লোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জাসদ করতেন। তখন তিনি বোমা বানাতে বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। লেখাপড়া শেষে জামালপুরে এসেও তিনি ৯০ সালের দিকে জাসদের মিছিল করেছেন। আমরা দেখেছি। সেই সময় জামালপুর শহরের কোনো মারামারিতে বোমা বা ককটেলের প্রয়োজন হলে তাঁকে ডাকা হতো। তিনি সব সময় বোমা সাপ্লাই দিতেন। এভাবেই তাঁর নাম হয়ে ওঠে বোমা জামান। কুকর্ম আর কুবুদ্ধি দিয়ে তিনি একসময় জামালপুর শহরের জামান বস হয়ে ওঠেন। তিনি মূলত আওয়ামী লীগের কলঙ্ক।’