সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কিশোর রিংকন হত্যা মামলার আসামীরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। হত্যা মামলা দায়েরের প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখানো কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ।
আজোব্দি কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে নিহত রিংকনের পরিবার। জানা যায় গত ১৬ জুলাই আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, জগন্নাথপুর, জোনে ১০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিংকনের মা বাসন্তী রানী। যার মামলা নং-১৪২।
মামলা সূত্রে জানা যায় , গত ২০২৪ সালের ২২ শে জুন জগন্নাথপুরের উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার আখলাকুর রহমান লুলু মিয়া ও কামাল হোসেনের মালিকানাধীন নলুয়ার হাওরে একটি মৎস্য খামারে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় উপজেলার চিলাউরা হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল গ্রামের শ্রীকান্ত বিশ্বাস ছেলে রিংকন বিশ্বাস (১৬) নামের এক কিশোরের।
দীর্ঘ কয়েক মাস যাবৎ সমধল গ্রামের লুলু মেম্বারের একটি গরুর ফার্মে চাকরি করে আসছিলো সে। ওই যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাড়ির মালিক তার মাকে জানায় আম পাড়তে গাছে উঠলে সেখান থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। রিংকনের গলা ও মুখে আঘাতের দাগ থেকে তার মায়ের সন্দেহ হয়। তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। তার মায়ের অভিযোগ বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুলু মেম্বার ও কামাল হোসেন তার ছেলেকে মারধর করতো। বিষয়টি রিংকন তার মাকে জানালে তাকে কিছুদিনের মধ্যে ওই খামার থেকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন বলে আশ্বস্ত করতেন তার মা। তবে আর বাড়ি ফেরা হলো না কিশোর রিংকনের। রহস্যজনক কারনে কোন ধরনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় ওই যুবকের লাশ। থানা পুলিশকে অবহিত না করে লাশটি স্থানান্তর করায় সন্দেহ আরো বাড়ে মা বাসন্তী রানীর।
রিংকনের পরিবার মৃত্যুর বিষয়টা থানাকে অবগত করার কথা বললে আসামীরা ধামাচাপা দিতে শুরু করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বিষয়টা দেখবেন বলে বিষয়টা কাউকে জানাতে নিষেধ করেন লুলু মেম্বার ও কামাল হোসেন। তাদের কথার বাহিরে গেলে বাড়িছাড়া করার হুমকি দেয় আসামীরা। রিংকনের রহস্যজনক মৃত্যু এলাকায় জানাজানি হলে এমনকি পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে আসামীরা চালাকি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে লিখিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে থানায় একটি অপমত্যু মামলা দায়ের করে।
এ ঘটনায় রিংকনের মা বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমাধিস্থল থেকে রিংকনের লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। ময়না তদন্তে তার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের দাগ ও আসামীদের অস্বাভাবিক আচরনে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে ধারনা করে রিংকনের মা গত ১৬ জুলাই আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর থানায় নথিভূক্ত (এফ.আই.আর) করা হলেও রহস্যজনক কারনে এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে আসামীরা।
মামলা দায়েরের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারে নি জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। ছেলে হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করায় হত্যার বিচার না পাওয়া ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে তার পরিবার। ছেলে হত্যার বিচার ছেয়ে মামলা দায়ের করায় আসামীরা প্রাণণাশের হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ ব্যপারে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান, জগন্নাথপুরে রিংকন হত্যা মামলায় এখনো পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামী গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।