নিউজ ডেস্ক :: ভাঙনের হাত থেকে বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষা এবং বর্ষা মৌসুমে তিন জেলার রক্ষা প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে সংসদীয় তদন্ত কমিটি। ওই তিন জেলার ১০ ইউনিয়নের বন্যা প্রতিরোধে ‘হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রোধ’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
জানা যায়, এ বছর জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজের প্রায় ৪২ শতাংশ বাকি রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। সংসদীয় কমিটির মতে, প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এ কারণে আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যার ঝুঁকিও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছে সংসদীয় তদন্ত কমিটি। জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
কমিটি সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে নদীর ঢাল ও নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ দ্রুত সম্পাদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পের নির্ধারিত সময় আগামী জুন হলেও আগাম বন্যা প্রতিরোধে এপ্রিলের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে।
পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে নদীর ড্রেজিং করতে হবে। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর সামনে জমে থাকা পলি অপসারণ না করে স্ট্রিম তৈরি এবং কুরিং সিস্টেম সচল রাখতে বলা হয়েছে। পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্বল্প ব্যয়ে দুটি ইনটেক চ্যানেল নির্মাণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নৌপথে সরবরাহের জন্য দুটি জেটি নির্মাণের ব্যবস্থা করা, প্রকল্পের প্রতিরক্ষা কাজ টেকসই করতে স্লপিং ব্লক, ডাম্পিং ব্লক এবং জিও টিউবের মান ও স্থাপন পদ্ধতি নিয়মিত তদারকির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন সম্পর্কে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, প্রল্পটি বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। প্রকল্প অনুযায়ী নদীর উভয় তীরের কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু গত আড়াই বছরে শুধু ডান তীরে কাজ হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নদীর বাম তীরে অবস্থিত। মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষার জন্য এ প্রকল্পটি পাশ হয়েছে। এখন বাম তীরে পলি জমে নদী সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ‘কুশিয়ারা ডাইক’ ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ৫টি, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার ২টি, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টরের ফসল ও হাওড়াঞ্চলের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এলাকাবাসীর দাবির ফলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সাত দশমিক চার কিলোমিটার নদীতীর ও ঢাল প্রতিরক্ষায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন কাজ শুরু থেকে ধীরগতিতে চলছে। এছাড়া নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, অদক্ষ লোকবল দিয়ে কাজ করানো এবং বাঁধের সঠিক মাপে মাটির ব্যবহার না করার অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি পাউবোকে জানানোর পর কাজ না হলে সংসদীয় কমিটিকে জানায়। পরে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গতকালের বৈঠকে জানানো হয়, মূল কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। স্থানীয় সংসদ-সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান ও পাউবোর মহাপরিচালক ফজলুর রশিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন।
পাশাপাশি স্থানীয় জনগণসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কমিটির তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সংসদীয় উপকমিটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, যা বৃহস্পতিবার মূল কমিটির বৈঠকে জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কমিটি সূত্র জানায়, সরেজমিন পরিদর্শনকালে প্রকল্প পরিচালক এসএম শহিদুল ইসলাম তদন্ত কমিটিকে জানান, কুশিয়ারা নদীর ডান তীরের নকশা প্রথমে অনুমোদিত হওয়ায় ডান তীর সংরক্ষণ কাজ আগে শুরু হয়। বাম তীরের নকশা দেরিতে অনুমোদনের কারণে বাম তীরের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি কম।
এছাড়া করোনাকালীন লকডাউন এবং নির্মাণসামগ্রী ও শ্রমিক সংকটের কারণে বাস্তবায়ন কাজে ধীরগতি হয়েছে। বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংসদীয় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কমিটির আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। পরে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলা হবে।সূত্র:সিলেটভিউ