সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা বৃহত্তর সিলেটের সকল পাথর ও বালু মহাল দ্রুত খুলে দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন গনঅধিকার পরিষদের সভাপতি, ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
তিনি বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্যের শিকার সিলেটের পাথর ও বালু শ্রমিকদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন বারের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আরিজ আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক আবুল হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা দক্ষিণর নেতা আবুল হাসেম,ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা ও জামিয়া মাহমুদিয়া যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি ইমাম উদ্দিন, পল্লী বিদ্যুৎ এর সাবেক ডিজিএম সিরাজুল ইসলাম, ব্যাংকার ও মানবাধিকার নেতা মনিরুল ইসলাম, এডভোকেট আহমেদ কায়সার,আলা উদ্দিন, জাফলং এর শ্রমিক নেতা ফখরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, বিছনাকান্দির শ্রমিক নেতা আজমল হোসেন, উতমা পাথর কোয়ারীর শ্রমিক নেতা তেরা মিয়া সহ অন্তত বিশজন নেতা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিপি নুর বলেন, সিলেটের সীমান্তবর্তি কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সহ গেজেটভুক্ত ৯টি পাথর ও বিভিন্ন বালু মহাল দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে পাথর ও বালি উত্তোলন বন্ধ বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের প্রধানতম বারকী পেশায় সম্পৃক্ত দশ লক্ষাধিক মানুষ ও বিশ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী আয়-রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বৈশ্বিক মহামারী কোভিট-১৯ এবং সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর ও বালু মহাল অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে বর্তমানে নিরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের এ ক্রান্তিলগ্নে আয়-রোজগার বঞ্চিত সিলেটের লাখ লাখ মানুষ। পাথর ও বালু উত্তোলনে জড়িত লক্ষ লক্ষ পাথুরে শ্রমিক, হাজার হাজার ট্রাক মালিক, শ্রমিক, হাজার হাজার ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক, ব্যবসায়ী, হাজার হাজার বেলচা শ্রমিক, হেমার শ্রমিক ও লোড আনলোড শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছে। হাতেগুনা কিছু শ্রমিক পেটের দায়ে বালু উত্তোলন করতে গেলে প্রশাসন তাদের উপর অমানবিক, নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়।
অপরদিকে দেশের পাথর মহালগুলো বন্ধ রেখে ভারত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানী করা হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ের জন্য সিলেটের সকল পাথর মহাল জরুরি ভিত্তিতে খুলে দেয়া এখন সময়ের দাবী।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের শ্রমজীবী মানুষ নানাভাবে বৈষ্যমের শিকার।ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হলেও এখনো সিলেটের সকল পাথর ও বালু মহালগুলো খুলে দেয়া হয়নি।
সিলেটের কয়েক লাখ শ্রমজীবী মানুষের ও ব্যবসায়ীদের বাচাতে অতি দ্রুত তাদের একমাত্র কর্মস্থল সকল পাথর ও বালু মহাল খুলে দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোড় দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনে আমরা পাশে থাকব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে খুশি করতে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী বন্ধ করে দিয়ে রিজার্ভের ডলার খরছ করে ভারত থেকে পচা পাথর আমদানী করেছে। পরিবেশের দোহাই দিয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষকে বেকার করে কোয়ারী বন্ধ করা হয়েছে। তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে সনাতন পদ্ধতিতে সকল পাথর ও বালু মহাল দ্রুত খুলে দেয়ার দাবী জানান। অন্যথায় সেখানে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটলে সরকার দায়ী থাকবে।
অপরদিকে গতকাল জাফলং মামার দোকানে কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবীতে সকাল ১১ টায় ৫৬টি সংগঠনের উদ্দোগে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠি হয়েছে।