1. mdjoy.jnu@gmail.com : admin : Shah Zoy
  2. satvsunamgonj@gmail.com : Admin. :
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন
  •                          

হাওরাঞ্চলের কথা ইপেপার

ব্রেকিং নিউজ
সুনামগঞ্জে সরকারি খাস বিল ও ডোবা নগদ টাকায় বিক্রির অভিযোগ শিক্ষক আমির আলীর বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ট্রাকের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে এক শিশু নিহত শাল্লা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন দোয়ারাবাজারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কমিটি গঠন : সভাপতি হেলালী, সম্পাদক আশিস, সাংগঠনিক মুন্না ১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর বিশ্বম্ভরপুরের সলুকাবাদ ইউনিয়নে জনসচেতনতামুলক গণনাটক প্রদর্শনী রণজিৎ সরকার ও ড. সাদিকসহ সাবেক ৩১ এমপির গাড়ি নিলামে সিলেট সীমান্তজুড়ে চোরাচালাণের স্বর্গরাজ্য ধরা ছোঁয়ার বাইরে মুল হোতারা শিক্ষায় বিশেষ অবদানে গুণিজন সম্মাননা পেলেন সিলেটের সন্তান শিক্ষক মুহিবুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জে ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদীতে পুলিশের অভিযান

শাবির সুনাম ম্লান হওয়ার পথে : নির্মাণ ত্রুটির কারণে বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেবে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার বিপুল প্রাণহাণীর শঙ্কা

Reporter Name
  • আপডেট করা হয়েছে শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪
  • ১০৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি:

শিক্ষা ও গবেষণায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় এটি। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অত্যাধুনিক এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ও গৌরব ম্লান হতে চলেছে।

নির্মাণ ত্রুটি এবং দুর্নীতির কারণে শাবির একাডেমিকসহ বেশকটি ভবনে ফাটল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এক ফুটেরও বেশি দেবে গেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার। দেয়াল ও বিমে ফাটল ধরে বিশাল ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানীর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই ভবনে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়, ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা ও প্রক্টর অফিস ছাড়াও রয়েছে শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টার।

কোটি কোটি টাকায় নবনির্মিত বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারের এমন বিপর্যয়ের জন্য শাবির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন অনেকে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাবি প্রকৌশল বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান এবং সুপারেনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি তদন্ত শেষ করলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে চলছে লুকোচুরি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাবি প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ দুই প্রকৌশলীর দুর্নীতির কারণে প্রশাসনিক ভবন-২, একাডেমিক ভবন-এ, ক্যাফেটেরিয়াসহ কয়েকটি বড় বড় ভবনে ফাটল ধরেছে। ধসে পড়ার শঙ্কার মধ্যেই কার্যক্রম চলছে এসব ভবনে। এছাড়াও ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে নবনির্মিত লন টেনিস গ্রাউন্ড। ক্ষয়ে যাচ্ছে ৩২০ একর আয়তনের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ অনেক সড়ক।

শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শাবির শুরু থেকে সব ভবন নির্মাণ হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ দুই কর্মকর্তার হাতে। টেন্ডারে নিজেদের সমঝোতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সর্বনিম্ন দরদাতা করে বছরের পর বছর ধরে কাজ পাইয়ে দিয়ে আসছেন তারা। টেন্ডারে নিয়মের বেড়াজালে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার সুবাদে অযোগ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই শাবিতে শত কোটি টাকার ভবন নির্মাণ করে আসছে। যার ফল হিসেবে নির্মাণের কয়েক বছর না পেরুতেই ভবনগুলোতে একে একে ফাটল ও দেবে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ওই দুই প্রকৌশলীর হাতেই পড়েছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি মেগা প্রকল্পের আওতায় ১২শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। এগুলোর প্রকল্প পরিচালক চিফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান এবং সহকারী প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল ইসলাম চৌধুরী। চলতি বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১০ তলা বিশিষ্ট আটটি ভবনের টেন্ডার আহ্বান করেছেন পিডি চিফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান।

১৯৯১ সালে যাত্রা শুরুর পর অনেক বছর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখন দুটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে ক্যাম্পাসের চিত্র।

মোট ১২শ’ কোটি টাকার এ দুটি প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ও আবাসিক হল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ। সঙ্গে রয়েছে ওয়ার্কশপসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। এরই মধ্যে দুটি ১০ তলা আবাসিক হল ও ছয়টি ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সামনে আরও আসছে।

শাবি প্রশাসনের একাধিক সূত্রের দাবি, ১২শ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে মেগা দুর্নীতির মচ্ছব শুরু হয়ে গেছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান এবং সুপারেনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল ইসলাম চৌধুরীর রাজত্বের সম্প্রসারণ ঘটলো। অতীতের মতো নিজেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বহুমুখী তৎপরতা চালিয়েছেন তারা। ইজিপিতে শেষ মুহূর্তে টেন্ডার জমা দিয়ে নিজেদের কোম্পানিকে সর্বনিম্ন দরদাতা করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল বেলা ১১টা ছিলো নতুন ছাত্র হলের ১০তলা ভবনের টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ সময়। একটি কোম্পানি শেষ দশ মিনিটে টেন্ডার জমা দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির কোটেশন নিজেদের সমঝোতার কোম্পানিকে সরবরাহের মাধ্যমে তারা এমন কা- ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, স্বায়ত্ত্বশাসিত এ প্রতিষ্ঠানে নজিরবিহীন ক্ষমতা নিয়ে বছরের পর অবস্থান করছেন দুই প্রকৌশলী, তাদের যেনো কোন নিয়ন্ত্রক নেই, নেই জবাবদিহিতা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রকৌশল বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, শাবির মেগা প্রকল্পসহ উন্নয়ন কাজে জবাবদিহিতা ও তদারকির স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এরই মধ্যে গঠন করেছে মনিটরিং কমিটি। অথচ চিফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান শাবির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের কমিটিকে না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো টেন্ডার আহ্বানসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচিত ফার্ম বাদ দিয়ে ওই দুই প্রকৌশলী নিজেরাই ভবনের নকশা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি)-এর আওতায় ১৮টি ভবনের জন্য ৯৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়।এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আমিনুল হক ভূঁইয়ার সময়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প নামে সাড়ে ৩ বছর মেয়াদি ২শ’ কোটি ৩৮ লাখ টাকার আরেকটি প্রকল্প একনেক থেকে অনুমোদিত হয়।

৩ বছর মেয়াদি সেই প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং উপাচারে‌্যর মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। পরে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এই প্রকল্পটি পুনরায় বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন।

মেগা প্রকল্প নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তখন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এই যে কাজ হচ্ছে, আশা করি আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। সব মিলিয়ে এই উন্নয়নগুলো বাস্তবায়ন হলে শাবি এগিয়ে যাবে একশ’ বছর।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাবিতে এরই মধ্যে কোটি কোটি টাকায় নির্মিত ভবনগুলো  দেবে যেভাবে ধসে পড়ছে তাতে শঙ্কিত পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। একইভাবে আরও বড় বড় ভবন নির্মাণে বরাদ্দ করা হাজার কোটি টাকা অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলীর বিত্ত বাড়ানোর নামান্তর। লোক দেখানো এসব মেগা উন্নয়নে মেগা দুর্নীতিতে ভেস্তে যাবে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের স্বপ্ন ও অক্লান্ত প্রয়াস।

৯৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০ তলাবিশিষ্ট ১টি ছাত্র হল ও ১টি ছাত্রী হল নির্মাণ, দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ, গ্র্যাজুয়েট ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ তলাবিশিষ্ট ১টি হোস্টেল নির্মাণ, সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১১ তলাবিশিষ্ট ২টি ভবন, জুনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং কর্মচারীদের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ।

এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১০ তলা বিশিষ্ট ১টি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ২ তলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপ নির্মাণ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, ৩ তলাবিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, ছাত্রদের আবাসিক হল এলাকায় ৪ তলাবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সাব-স্টেশন নির্মাণসহ আরও কিছু ভবন নির্মাণ কাজ।

শাবি’র চীফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, কি কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ভবনের কিছু অংশ দেবে গেছে এবং কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে তা নির্ধারন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরই বুঝা যাবে কি কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার দেবে গেছে। যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ১৫/২০ বছর আগে বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ভবনটি নির্মান করা হয়েছিল। কি কারণে ভবনটি দেবে গেল এবং ফাটল দেখা দিয়েছে সে জন্য আমি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটির রিপোর্ট আমার হাতে এসেছে। যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন র্নিমানে যাতে এর পুর্নরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি প্রতিটি কাজের মান নিয়ন্ত্রনপূর্বক কাজ করাবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন