স্টাফ রিপোর্টার:
জনবল নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মি ও দুর্নীতির অভিযোগে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে—দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বুধবার কমিশন এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ শাখার উপ—পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম। দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা মামলাটি দায়ের করবেন বলে জানা গেছে।
মামলায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচায্যর্ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরী, উপ—পরিচালক (পরিবহন ও উন্নয়ন) ফাহিমা খানম চৌধুরী, সহকারী রেজিস্ট্রার অঞ্জন দেবনাথসহ ৫৮ জনকে আসামি করে শিঘ্রই আদালতে মামলা রুজু হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দুদকের সুত্র তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদের বাইরে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ১০৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ীভাবে দেয়া এসব নিয়োগে উপাচার্যে্যর আত্মীয়—স্বজন থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্যের স্বজনেরাও নিয়োগ পেয়েছেন। এমনকি উচ্চশিক্ষার অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউজিসির কর্মকর্তাদের সুপারিশেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদে বেআইনিভাবে আটজনকে ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
সুত্র আরও জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে। ইউজিসির তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের মেয়াদ আর না বাড়ানো; অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়ার পরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা এবং পদোন্নতির পর পাওয়া অতিরিক্ত বেতন—ভাতার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের চতুর্থ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী।
আইন অনুযায়ী, ইউজিসির অনুমোদিত পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ভিসি ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অ্যাডহক ভিত্তিতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি ও দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তে নামে। তাদের প্রতিবেদনে অনিয়মের সত্যতা মেলায় ২০২২ সালের ২২ জুন দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী ও নঈমুল হক চৌধুরীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি নতুন উপাচার্য হিসেবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এএইচএম এনায়েত হোসেনকে নিয়োগ দেয় সরকার।