স্টাফ রিপোর্টার:
বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান আব্দুর রাজ্জাক ন্যায় বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। মুক্তিযোদ্ধার ভাতা থেকেও বঞ্চিত আব্দুর রাজ্জাক।
জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাক সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের রংপুর গ্রামের মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা কালা মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র। সে পেঠের দায়ে ৭জন ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীসহ সিলেটের শাহপরান থানাধীন টিকরপাড়ায় একটি ঝুপড়ি ঘরে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দুই ভাই ও এক বোন মিলে সুনামগঞ্জ সোনালী ব্যাংক থেকে চার মাস পূর্বে ১০ লক্ষ টাকা লোন তুলে বড় ভাই বাতেন মিয়া ৪ লাখ, রাজ্জাক মিয়া ৩ লাখ ও বোন আনোয়ারা বেগম ৩ লাখ টাকা ভাগ বন্টন করে নেয়। রাজ্জাকের অংশের ৩ লাখ টাকা বড় বোন আনোয়ারার কাছে জমা রাখেন এবং এই টাকা ভাগনা দেলোয়ারকে বিদেশ পাঠানোর জন্য বড় বোন তার কাছে টাকাগুলো দাবী করে এবং রাজ্জাক মিয়া টাকা দিয়ে তার ছেলে—মেয়েদের পড়াশুনা ও একটু জায়গা ক্রয় করার জন্য বড় বোনকে জানায়। বড় বোন ও ভাগনারা শুনে খুবই রাগান্বিত হইয়া উঠে এবং তার জমাকৃত টাকা নেয়ার জন্য গেল ৯ মার্চ সকালে ফোন করে জানায় যে, তোর টাকা তুই নিয়ে যায়। বড় বোন আনোয়ারা বেগম ঘর থেকে ৩ লাখ টাকা বের করে রাজ্জাকের হাতে গুণে দেয় এবং রাজ্জাক টাকা নিয়ে বাসায় ফেরার পথে বালুচর পয়েন্টে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওৎ পেতে থাকা বোন জামাই ছিদ্দেক, ভাগনা আনোয়ার, হান্নান ও দেলোয়ার পথরোধ করে এবং বেড়ক মারপিট করিয়া গুরুতর আহতবস্থায় তাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েও তাকে আরও মারপিট করে এবং তার সাথে থাকা নগদ ৩ লাখ টাকা জোরপুর্বক ছিনতাই করিয়া নিয়া যায় এবং তার বাড়ীতে ফোন দিয়ে জানায় যে, রাজ্জাকের অবস্থা খারাপ তাকে নিয়ে যাও। মোবাইল ফোনে তার প্রতিবেশী সেলিম মিয়া ফোন করে ভাগনা আনোয়ারকে কি হইছে জানতে চাইলে আনোয়ার জানান, মামুকে একটু মলম দেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে যেতে বলেন। এ খবর পেয়ে রাজ্জাকের স্ত্রী ও বড় সন্তান জসিম মিয়া এমসি কলেজ হোস্টেলের সামনে মুমুর্ষ অবস্থায় দেখতে পায় এবং তাকে নিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে ছয় দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে বোন জামাই ও ভাগনাদের বিরুদ্ধে শাহপরান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বিগত ২রা মে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ২য় আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শাহপরান পুলিশকে এফআইআর ভুক্ত এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেন। যার মামলা নং শাহপরান থানার সিআর মোকদ্দমা নং ১৭১/২৩ইং। আদালতের নির্দেশনা পেলেও সঠিক সময়ে মামলাটি এফআইআর না করে কালক্ষেপন করতে থাকলে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হন রাজ্জাক। আদালত থেকে তাগাদা দেয়ার পর মামলাটি রুজু করলেও আসামীদের গ্রেফতার করা হয়নি। পরবতীর্তে আসামীরা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার বাদী রাজ্জাক ও তার ছেলে—মেয়েদের হুমকি দিতে থাকে। বর্তমানে রাজ্জাক আসামীদের ভয়ে কোথাও কাজ কাম করতে না পেরে মারাত্মক অর্থ কষ্টে সন্তানদি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মামলাটি শাহপরান থানার এসআই আফিস তদন্ত করছেন বলে জানা যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকতার্ আফিস জানান, ঘটনার সাক্ষী প্রমানাদি গ্রহন করছি। ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে দ্রুত চার্জশীট দাখিল করা হবে।
মামলার বাদী রাজ্জাক মিয়া জানান, আমার আপন বোন, বোন জামাই ও ভাগনারা আমার তিন লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় এবং আমাকে বেদড়ক মারপিট করিয়া অজ্ঞান করিয়া রাস্তায় ফেলে চলে যায়। আমি ন্যায় বিচারের আশা করছি। আমার বড় ভাই বাতেন মিয়াও এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে আমি মনে করি। কারণ বাবার মুক্তিযুদ্ধার যাবতীয় কাগজপত্রে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আসামী আনোয়ার মামলা থেকে জামিন পেয়েই আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ীর চাকায় পিষ্ট করার চেষ্টা করেছে।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ (র:) থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের জানান, আসামীরা জামিনে বের হয়ে বাদীকে কোন ধরনের হুমকি প্রদান করলে থানায় জিডি করার পরামর্শ প্রদান করেন এবং জিডি করলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার কথাও জানিয়েছেন।