হাওরাঞ্চলের কথা :: সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট আয়োজিত মহান একুশের আলোকে দশ দিন ব্যাপী নাট্য প্রদর্শনী’র সমাপ্তি দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান বলেন,মহান ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর থেকে প্রত্যেকটি অর্জনের পিছনে এদেশের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মী দের ভুমিকা রয়েছে। তিনি বলেন,সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটে নাট্যচর্চার বিকাশ ও সংস্কৃতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলছে।তিনি। নাট্য আন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার উল্লেখ করে দেশকে উন্নত,কল্যাণমুখী এবং নান্দনিক সমাজ গঠনে নাট্য কর্মীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানের প্রথমেই ছিলো এমকা সিলেটের পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নৃত্য। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উজ্জল দাশ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত এর পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাট্য পরিষদের প্রাক্তন প্রধান পরিচালক ব্যারিস্টার মো: আরশ আলী, আবৃত্তি সম্বন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলির সদস্য, মোকাদ্দেস বাবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এর কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন। পরিষদভূক্ত যেসব নাট্য সংগঠন নাট্য প্রদর্শনীতে নাটক মঞ্চস্থ করেছে, তাদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন, জেলা প্রশাসক, সিলেট।
সন্ধ্যা সাতটায় মূল মঞ্চে ছিলো দর্পণ থিয়েটার সিলেটের পরিবেশনায় নাটক ‘মিআ কলপা”। নাহিদ পারভেজ বাবুর রচনায় নাটকটি নির্দেশনা প্রদান করেন নিরঞ্জন দে।
নাটকের কাহিনি : মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। সমাজ, বাস্তবতা, ইন্দ্রিয়সুখ, ভোগ বিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ এসব নানা কারণে মানুষ অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। কৈশোরে, যৌবনে, মানুষ অপরাধী হয়ে নানা ভুল পথে পরিচালিত হয়। একসময় তার ভেতরের মানুষটি তাকে বার বার ফেরত আসতে বলে। আত্মোপলব্ধি হতে থাকে ধীরে ধীরে। তখন মানুষ তার অতীতের কৃতকর্মের দায়মুক্তি চায়। পাপ থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ হতে চায়। নিজের কৃতকর্মের জন্যে তৈরী হয় অনুশোচনা। অতীতের সকল পাপ কাজের কথা খুলে বলতে চায় একটা নির্ভরতার জায়গায়। যেখানে মিলবে মুক্তির পথ।
মুলত: একটি বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে লিখিত এ নাটকটিতে প্রতিটি চরিত্র যেনো নিয়তির হাতে বন্দি। যা তাদের নিজ কৃতকর্মের ফলে তৈরি হয়েছে। দর্শকদের জন্যে আমাদের সকল কর্ম উদ্যেগ। সুতরাং আপনাদের ভালোবাসা এবং মতামত আমাদের আগামীর পথ চলার পাথেয় হয়ে থাকবে। আমাদের যাত্রা হোক মুক্তির পথে শুদ্ধতার পথে।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- নিরুপম ঘোষ নংকু/নিরঞ্জন দে, নাহিদ পারভেজ বাবু, ভাস্কর দেব অর্ঘ্য, সামান্থা ঘোষ। নেপথ্যে ছিলেন- আলো পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ -সুপ্রিয় দেব পুরকায়স্থ, রূপসজ্জা- সুমন রায়, মঞ্চ পরিকল্পনা- নাহিদ পারভেজ বাবু, মঞ্চ নির্মাণ- মৃত্যুঞ্জয় ঋষি, পোশাক পরিকল্পনা- জয়শ্রী দেব জয়া।
নাটক শেষে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের পক্ষে থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন- সংস্কৃতিজন ডাক্তার জহির অচিনপুরী, এবং উত্তরীয় প্রদান করেন নাট্য পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ মনির হেলাল ।
নাট্য প্রদর্শনী’র লগো অলংকরণে এবং সর্বাঙ্গীন সাহায্য সহযোগিতা’র জন্যে নাট্যশিল্পী অরূপ বাউলকে উত্তরীয় প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নাট্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় দেব শান্ত,প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক অচিন্ত কুমার দে,নির্বাহী সদস্য ফারজানা সুমি, দিবাকর সরকার শেখর।
নাটক শেষে সিলেটের একসময়কার তরুণ ব্যান্ড শিল্পী সন্দীপ বনিক মুন্নার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
দশদিন ব্যাপী নাট্য প্রদর্শনীতে বিশেষ সহযোগিতার জন্য,সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ সিলেট এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
নাট্য পরিষদ নাট্য প্রদর্শনীতে আগত সকল দর্শক,অংগ্রহণকারী নাট্যদল,সংবাদমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।