সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবতীর্ শাহ আরেফিন টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। গেল ২৩ জানুয়ারী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে ৪০জনের নামে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫(সংশোধিত—২০১০) এর ধারা ৬(খ), ১৫(১) ধারার বিধান মোতাবেক সিলেটের স্পেশাল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত(পরিবেশ) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত—২ এ মামলা রুজু করলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। প্রকাশ্যে দিবালোকে বড় বড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে উত্তোলন করছে পাথর এবং শত শত ট্রাক ভর্তি পাথর পুলিশ প্রহরায় বিভিন্ন ক্রাশার মেশিনে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ১হাজার করে টাকা নিচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই। পুলিশের গায়ে পোশাক না পড়ে মুখে মুখোশ পড়ে একদল পুলিশ এগুলো প্রকাশ্যে পাচার করছেন। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করছে সিন্ডিকেট চক্র। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোম্পানীগঞ্জের বিশিষ্ট পাথরখেকো মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে আইয়ুব আলী, রফিক মিয়া, মনির মিয়া, আব্দুল করিম, আব্দুর রশিদ সহ প্রায় ৪০/৫০ জনের নেতৃত্বে হাজার হাজার শ্রমিক ড্রেজার ও ভেকু মেশিন লাগিয়ে গভীর গর্তের নীচ থেকে পাথর উত্তোলন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেহ কথা বলার সাহস পায় না। কোন সাংবাদিকও ছবি উঠানোর সুযোগ নেই। চতুর্দিকে রয়েছে তাদের পাহারাদার। খুব গোপনে পাথর উত্তোলনের ডিডিও ধারনা করা হয়। স্থানীয় বান্দিারা জানান, কোম্পানীগঞ্জের থানা পুলিশ ও নোয়াকুট বিওপি ক্যাম্পের সদস্যদের ম্যানেজ করেই খনিজ সম্পদ পাথর লুট করা হচ্ছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই। গেল ২৩ জানুয়ারী পরিবেশ আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তারা হলেন— কাঠালবাড়ী গ্রামের জিয়াদ আলী পুত্র পাথর খেকো মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (৪৫), জালিয়ার পাড় গ্রামের মৃত রহিম উল্লার পুত্র মনির মিয়া (৪৫) একই গ্রামের মৃত নঈম উল্লাহর পুত্র আব্দুল করিম (৫০), আব্দুর রশীদ (৫৫), চিকাডহর গ্রামের মৃত মনফর আলীর পুত্র আইয়ুব আলী (৫৫), আঞ্জু মিয়া (৫০), সোহরাব আলী (৩৯), তৈয়াব আলী (৪৫), বতুল্লাহ মিয়া (৪০), মৃত ইউনুস আলীর পুত্র আব্দুল হান্নান (৪০), আনোয়ার আলী (৫৫), একই গ্রামের মৃত উস্তার আলী পুত্র আনফর আলী (৫৫) মৃত রফিক উল্লাহর পুত্র গরীব উল্লাহ (৫৮), জালিয়ারপাড় গ্রামের মৃত আব্দুল গণির পুত্র মোঃ ইব্রাহিম (৪০), মৃত আব্দুল গণি’র পুত্র আব্দুন নূর (৪৫), মৃত আব্দুল মিয়ার পুত্র মোঃ ইসমাইল (৩৮), মৃত কনাই মিয়ার পুত্র আলী হোসেন (৩৫), মাসুক মিয়ার পুত্র আবুল হোসেন (৩০), ফয়জুর রহমান (৩৮) মৃত আহাদ আলীর পুত্র রফিক মিয়া (৩৫), আব্দুল খালিকের পুত্র বাবুল মিয়া (৪০), পিতা:, মৃত গুকুর আলীর পুত্র যশর মিয়া (৫০), ফারুক মিয়া (৪০), কালা মিয়া (৩৮), এলাইছ মিয়া (৩৬), বাবুল নগর গ্রামের তৈয়ব আলীর পুত্র রাসেল মিয়া (৩২), পিতাঃ তৈয়ব আলী, চিকাডহর গ্রামের গৌছ মিয়ার পুত্র লিটন মিয়া (৩৭), পাড়–য়া উজানপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র সোহেল মিয়া (৩০) , বতু মিয়ার পুত্র কেয়ামত আলী (৩৮), পাড়–য়া মাঝপাড়া গ্রামের মৃত তেরা মিয়ার পুত্র হাসনু চৌধুরী (৫৫), চিকাডহর গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র আকদ্দুছ আলী (৪৫), আব্দুল মান্নানের পুত্র আব্দুর রহিম (৩৮),নাইরাইনপুর গ্রামের ছবর আলী পুত্র আব্দুর রহিম (৩৫),চিকাডহর গ্রামের আজির উদ্দিন(৫৫), নারাইনপুর গ্রামের ছবর মিয়ার পুত্র হাসন মিয়া (৪২), চিকাডহর গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র শাহীন মিয়া (৩২), জালিয়ারপাড় গ্রামের মৃত আব্দুল মিয়ার পুত্র সেবুল আহমদ, পাড়–য়া মাঝপাড়া গ্রামের আব্দুল বারীর পুত্র আলী হোসেন (৪৫), পাড়–য়া গ্রামের মৃত আব্দুল মিয়ার পুত্র হুঁশিয়ার আলী (৪২), আব্দুল বারীর পুত্র আলী হোসেন (৪৫) এর বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ এর ধারা—৫ মোতাবেক মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা দিলেও স্থানীয় পুলিশ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশ উপজেলা প্রশাসন ও পাথর খেকোরা মিলে সিন্ডিকেট তৈরী করে শাহআরেফিন মাজারসহ মসজিদ ও মাদ্রাসার মাটি খুড়ে শেষ করে দিয়েছে। সরকার এটা বন্দোবস্ত দিলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেত। অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষ বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পেত। সরকারীভাবে বন্দোবস্ত কিংবা লীজ না দেয়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শাহআরেফিন টিলাসহ আশপাশের খনিজ সম্পদ লুট করা হয়েছে। এই সিন্ডিকেটে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি বলে কিছু নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লুটপাট করছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, শারপিন টিলা কেটে পাথর বিক্রির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর আরও একটি মামলা দিয়েছে। আমার থানার কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সিলেট জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, আমি আগে কখনও শুনিনি শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধভাবে পাথর লুট করা হচ্ছে। আপনার কাছ থেকে শুনেছি। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা জানান, কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলা কেটে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছি। এখন পর্যন্ত মামলার কি অবস্থা আছে জেনে আপনাকে জানাতে পারব। খনিজ সম্পদ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। খনিজ সম্পদ আইনে মামলা করা না হলে কোন সুফল পাওয়া যাবে না