সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগরের ৪টি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজের নামে ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ না করেই সরকারী বরাদ্দের কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট পিআইও’র বিরুদ্ধে প্রকল্প উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা ও আত্মসাৎ করার ফলে উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
প্রত্যেক অর্থবছরের জুন মাসের মধ্যে সকল উন্নয়ন কাজের চুরান্ত বিল ছাড় দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কোনো কারনে কাজ না হলে বরাদ্দের টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠানোর কথা। কিন্তু তিনি তা না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জানা যায়, উপজেলার ২ য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ের টি,আর,কাবিখা ও কাবিটা বরাদ্দের ৮২টি প্রকল্পের মধ্যে ১০থেকে ১২ টি প্রকল্পের নামে- মাত্র কাজ করে বরাদ্দের সাকুল্য টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। কাজ নেই এরকম অনুমান ৭০টি প্রকল্পের বরাদ্দের অর্ধেক বিল জুন মাসের মধ্যে ছাড় হয়। বাকি অর্ধেক বিল ছাড় দেয়া হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে। এমনকি প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ করার যথেষ্ট উপযোগী সময় থাকার পরও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ করা হয়নি। প্রকল্পের কাজে এককালীন বিল ছাড় দেয়ার কোন নিয়ম নেই। অথচ কাজ নেই এসব প্রকল্পের বিল এককালীন ছাড় দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় ২০২৩-২৪ ইং অর্থবছরে ২য় পর্যায়ে কাবিখা (বিশেষ) কর্মসূচির আওতায় ৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজে ৩৮ মে. টন খাদ্যশস্য (চাল-গম) বরাদ্দ হয়। ৩য় পর্যায়ের (বিশেষ)কাবিটা প্রকল্পের কাজে ১২ টি প্রকল্পে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪র্থ পর্যায়ে ১১টি প্রকল্পের কাজে ১৫ লাখ টাকা, ৩য় পর্যায়ে কাবিটা (সাধারণ) ৭ টি প্রকল্পের কাজে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৪ টাকা, ২য় ও ৩ য় পর্যায়ের কাবিখা (সাধারণ) ২০ টি প্রকল্পের কাজে ৬০ মে. টন খাদ্যশস্য (চাল-গম) বরাদ্দ হয়। টি-আর (সাধারণ) কর্মসূচির আওতায় ২য় পর্যায়ে ৯ টি প্রকল্পের কাজে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ টাকা ও ৩য় পর্যায়ে ৯টি প্রকল্পের কাজে ১৩ লাখ ৯৫ হাজার ৮৭৩ টাকা, তৃতীয় পর্যায়ের টি, আর (বিশেষ) ১০ টি প্রকল্পের কাজে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য পর্যাক্রমে ২ য়,৩ য় ও ৪র্থ পর্যায়ে টি,আর ও কাবিখা-কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ৮২ টি প্রকল্পের বিপরীতে ৯৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৪০ টাকা (নগদ) ও ৯৮ মে.টন চাল ও গম বরাদ্দ হয়। বাস্তবে গুটি কয়েক প্রকল্পের কাজের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। তাও কাজ হয়েছে নামেমাত্র। অধিকাংশ প্রকল্পের কোন অস্তিত্ব নেই। ২য় পর্যায়ের কাবিখা (বিশেষ) ৪টি প্রকল্পের তালিকা জেলা প্রশাসক অনুমোদন করেন ২৮ জানুয়ারি ২৪ ইং তারিখে। এ ৪টি প্রকল্পের মধ্যে বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের মাটিয়ারবন সড়কে মাটি ভরাটের কাজে ১০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। চামরদানী ইউনিয়নের দুগনই গ্রামের সড়কে মাটি ভরাটের কাজে ১০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের মাটি ভরাটের কাজে ৮ মে.টন গম বরাদ্দ হয়। কাজ করার যথেষ্ট উপযোগী সময় থাকা সত্বেও এ তিনটি প্রকল্পের কোন কাজ ছাড়াই এককালীন বিল ছাড় দেয়া হয়েছে। ২য় পর্যায়ের কাবিটা (বিশেষ) প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন হয় ১৮ এপ্রিল ২৪ ইং তারিখে। চতুর্থ পর্যায়ের কাবিটা প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন হয় ১৩ জুন ২৪ ইং তারিখে। ২য় পর্যায়ের কাবিখা (সাধারণ) প্রকল্পের পৃথক দুটি তালিকা অনুমোদন হয় ১৮ এপ্রিল ২৪ইং তারিখে ও ২১ এপ্রিল ২৪ তারিখে। ৩য় পর্যায়ের কাবিখা (সাধারণ) বরাদ্দের প্রকল্পের পৃথক দুটি তালিকা ও একটি কাবিটা প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন হয় ১৩ জুন ২৪ ইং তারিখে। দ্বিতীয় পর্যায়ে টি, আর সাধারণ প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন হয় ১৮ এপ্রিল ও ৩ য় পর্যায়ে টি,আর প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন হয় ১৩ জুন। ১ম ও ২য় পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ করার উপযোগী সময় ছিল। কিন্তু কিছু প্রকল্পের নামেমাত্র কাজ হয়েছে আর কাজ হয়নি অধিকাংশ প্রকল্পের। তৃতীয় ও ৪র্থ পর্যায়ের প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন হয় জুন মাসের ১৩ তারিখে। তখন প্রকল্প স্থান পানিতে নির্মজ্জিত হয়ে যায় । এসব প্রকল্পের স্থানে কাজ করার উপযোগী সময় হবে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে। কাজ ছাড়াই এ সকল প্রকল্পের বরাদ্দের অর্ধেক ছাড় হয়েছে গত জুন মাসে। বাকী অর্ধেক বিল ছাড় দেয়া হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকল্প সভাপতি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বরাদ্দের অর্ধেক ৫০ হাজার টাকা চুরান্ত বিল পেতে পিআইও কে দিতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। অন্য এক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি জানান ইউএনও অফিসের সহকারী শামসুদ্দোহাকে ১লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি প্রকল্পের বিল ছাড় করাতে হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব সরকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বরাদ্দ আসার পর অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে ও প্রকল্প স্থান পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব হয়নি।
আগামী বছরে উপযোগী সময়ে কাজ করবে কথা বলে প্রকল্পের সভাপতিদের অনুকূলে বরাদ্দের বিল ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে, টাকা নিয়ে বিল ছাড় দেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তবে মধ্যনগরের তৎকালীন ইউএনও টাকা নিতে পারেন বলে তিনি জানান। মধ্যনগর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও অতীশদর্শী চাকমা অনত্র বদলি হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা নতুনভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছি। এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া ।