সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাটেই দৈনিক প্রায় দেড় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনাবেচা হয় । এর বেশরিভাগ চিনি আসে কানাইঘাট হয়ে সিলেট জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে। নগরে গৌছার পর দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের স্টিকারযুক্ত বস্তায় ভরে এসব চিনি পাঠানো হয় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা শহর, উপজেলা সদর ও হাটবাজারে।
সূত্রমতে জেলার , কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ,জকিগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাপণ্য সিলেটে প্রবেশ করে। সীমান্ত এলাকার অন্তত এক হাজার চোরাকারবারি এই কাজে জড়িত। এদের সিংহভাগই কানািইঘাট উপজেলার। জেলার বিভিন্নি স্থানে ভারতীয় চোরাই চিনি আটকের খবর পাওয়া গেলেও পাচারের তুলনায় তা খুবই কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, একানাইঘাট উপজেলারিএকটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী শামিলে কতিপয় নামধারী মিডিয়া কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য এই বৃহৎ চোরাচালান চক্রের সাথে জড়িত। কানাইাঘাট-শাহবাগ, কানাইঘাটের বাংলাবাজার ও সড়কেরবাজার হয়ে ট্রাক ও পিকআপ যোগে ভারতীয় চোরাই চিনি জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে পৌছায়। এর আগে কানাইঘাটের কারাবাল্লা, ডোনা, মূলাগুল, লোভাছড়া এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া চিনি নৌকা যোগে সড়ক সংলগ্ন নদীঘাটে পৌছানো হয়ে থাকে। জৈন্তাপুর- গ্য়োইনঘাট সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া চিনি ট্রাক ও পিকআপ করে দরবস্ত-চতুল হয়ে কানাইঘাটের বায়মপুরে পৗাছানো হয়। এর পর তা অন্য গাড়ি দিয়ে জকিগঞ্জ রোড হয়ে সিলেটে পৌছায়।
ভারতের মেঘালয়া রজ্যের পাড়াড়ি এলাকার কিছু ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে কানাইঘাটের চোরাকারবারিরা বৈদেশিক মূদ্রা ডলার ও ভারীয় রুপির বিনিময়ে চিনি কিনে আনেন। এ জন্য বাংলাদেশি চোরাকারবারীদের পক্ষ থেকে সীমান্তে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। শ্রমিকরা দিনরাতে সুযোগ বুঝে ৫০ কেজির চিনির বস্তাগুলো মাথায় করে সীমান্ত পার করে দেন। পরে কোথাও নৌকা, কোথাও ব্যাটারিচালিত টমটম, অটোরিকশা, ট্রাক কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিনির বস্তা মজুত করে পরে বড় যানবাহন দিয়ে পাচার করা হয়ে থাকে। চোরাই চিনি মজুতের সব চেয়ে বড় ঘাটি বা স্থান হচ্ছে কানাইঘাটের বায়মপুরের মহিলা মাদ্রাসার সামন। দ্বিতীয় স্থান বাংলাবাজার ও তৃতীয় স্থান সড়কের বাজার।
সূত্রমতে, কানাইঘাটের সুরমা নদীর দক্ষীন পাড়ে পুরাতন বাস স্টেশনে রয়েছে চোরাকারবারী রিয়াজ ও শিব্বিরের তত্বাবধানে ভারতীয় চোরাই পন্যের ৪টি গোদাম। বায়মপুরের চোরাচালানী শিব্বিরের বাড়ীতে ২টি চোরাইমালের গোদাম। এখান থেকে তাহারা বিভিন্ন কোম্পানীর গাড়ীতে ভারতীয় চিনির চোরাই বস্তা বদল করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। চোরাকারবারীরা চিনি নিয়ে আসার সময় পুলিশের লাইনম্যান ও নামধারী কতিপয় মিডিয়াকর্মী এগুলোর তত্বাবধান করে থাকেন। বিনিময়ে তারা চোরকারবারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের বখরা নিয়ে থাকেন।
সূত্রমতে, ট্রাকপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় লাইনম্যান ও মিডিয়া নামধারীদের। তারা পুলিশ ম্যানেজের সব দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। কানাইঘাটের ধনপুরের একজন ও শিবনগরের একজন এ সব লাইনম্যানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তারা আবার নিজেদেরকে একাধিক গণমাধ্যম ক্লাবের নেতাও পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে সিলেট জেলা পুলিশ জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ১ হাজার ৪৩১ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বস্তায় ৭১ হাজার ৪৯ কেজি চিনি ছিল। যার দাম ২ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৫ টাকা। এসব ঘটনায় ২৩টি মামলা হয় এবং পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
কানাইঘাট থানার নবাগত ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি কানাইঘাট এসে সব তথ্য নিতেছি। চোরা কারবারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বিজিবি সিলেটের একজন পদস্থ কর্তাব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমান্তে আমাদের নজরদারি অত্যন্ত কঠোর। এরপরও দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। বিজিবির কোনো সদস্যের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’