হাওরাঞ্চল ডেস্ক:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র—জনতার আন্দোলনে দেশের যুবসমাজ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, একইভাবে বন্যা মোকাবিলায়ও তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ ও তরুণ সমাজের ঐক্য ও একতায় আমরা অভিভূত। তরুণরা আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন, সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চলমান বন্যা মোকাবিলা করতে হবে।
শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এসব বিষয় অবহিত করেন।
দেশে চলমান বন্যা মোকাবিলায় সরকারি—বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবীদের কার্যক্রম সমন্বিতভাবে পরিচালনার পরিকল্পনাই ছিল বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তরুণ সমাজের স্পিরিটের সঙ্গে একীভূত হয়ে ত্রাণ কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রবাসীরাও বন্যা মোকাবিলায় বিশেষ অবদান রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। বন্যা পরবর্তী সময়ে অনেকের ঘর—দরজা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হবে। অনেক ধরনের রোগ—ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে। ওই সময় ত্রাণ—পুনর্বাসন ও চিকিৎসা যাতে সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হয়, তার ওপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন। বর্তমানে বন্যাদুর্গত এলাকায় নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তারপরও টাওয়ারগুলো যাতে সচল রাখা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, মাঠে কর্মরত সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করা হচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন কোম্পানি, সেনাবাহিনীসহ সবার মধ্যে কাজের সমন্বয় করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় বন্যা—ওই সব এলাকার অনেক মানুষ বিদেশে থাকেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব আরও জানান, স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই এনজিওদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তারা অনেক দুর্গম এলাকায় গিয়ে কাজ করেন। বিপুল পরিমাণ ফান্ড ব্যবহার করে। ফলে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, সরকারের তরফ থেকে ছোট—বড় ও মাঝারি— মোট ৪০টি এনজিওকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে আন্তরিক পরিবেশে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। বন্যার সময়, বন্যাপরবর্তী চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম যাতে সমন্বিত ভাবে হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এনজিও সংগঠকদের পক্ষ থেকে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের মানুষ বন্যার্তদের জন্য যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাতে আমরা অভিভূত। এনজিও সেক্টরকে প্রথমবারের মতো দুর্যোগে কাজে ডাকা হয়েছে। এনজিওরা যেহেতু মাঠপর্যায়ে কাজ করে, সেহেতু প্রধান উপদেষ্টা জানতে চেয়েছেন—বন্যা মোকাবিলায় আমাদের মতে দ্রুততর পদক্ষেপগুলো কি কি? আমরা কি দেখছি। স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং পুনর্বাসন নিয়ে আমরা কিভাবে কাজ করতে চাই।
আসিফ সালেহ আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দাতা সংস্থাকেও আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। তাদের সঙ্গে বন্যা নিয়ে কথা বলবেন। দাতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে। সরকারি—বেসরকারি উদ্যোগে আমরা যৌথ কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছি। সেভাবে আগাতে পারলে ভালো ফল আসবে।
তিনি আরও বলেন, খসড়া একটা হিসাবে দেখা গেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফান্ড লাগবে। যেসব এলাকার পানি নেমে গেছে, সেখানে নিট একটা সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। সমীক্ষার ক্ষেত্রে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার। মাঠপর্যায়ে ত্রাণ কাজের সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী। চূড়ান্ত সমীক্ষা শেষে প্রধান উপদেষ্টা দাতাদের সঙ্গে মতবিনিময়