খাদ্যের উপকরণের দাম বেড়েছে। তা আবার কমেছেও। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২২ সালের অক্টোবর–ডিসেম্বর সময়ে মুরগির খাদ্যের মূল উপকরণ ভুট্টার দাম টনপ্রতি ৩২২ মার্কিন ডলার ছিল। গত জুলাইয়ে তা ২৪২ ডলারে নেমেছে। এ বছরের শুরুতে (জানুয়ারি–মার্চ) যে সয়াবিন মিল টনপ্রতি ৫৯৭ ডলার ছিল, তা জুলাইয়ে বিক্রি হয়েছে ৫১৭ ডলারে।
দেশে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিলেও ডিমের ৯০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন নয়, তা আশপাশের দেশে ডিমের দাম দেখলেই বোঝা সম্ভব।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম আলোর সংবাদদাতা অমর সাহা আজ রোববার সকালে ৩০টি ডিম কিনেছেন ১৫৫ রুপি দিয়ে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০৫ টাকা। হালি পড়েছে ২৭ টাকা।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ভলান্টারি কনজ্যুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান এখন ভারতের চেন্নাইতে রয়েছেন। সেখানে আজ সকালেই তিনি ৬টি ডিম কিনেছেন ৪২ রুপি দিয়ে। বাংলাদেশি মুদ্রায় হালি পড়েছে ৩৭ টাকা।
পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, সেখানে এক হালি ডিমের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ টাকার সামান্য বেশি। বাংলাদেশে ডিমের দাম ৫৩ শতাংশ বেশি কেন, সেটাও একটি গভীর প্রশ্ন।
বাংলাদেশে ছোট খামারিরা ডিমের বাজারের নিয়ন্ত্রক নন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই নিয়ন্ত্রক। তাদের কোনো প্রতিযোগী নেই। বাংলাদেশে ডিম আমদানি কার্যত নিষিদ্ধ। আমদানি করতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আগাম অনুমোদন নিতে হয়। সে অনুমতি কখনোই পাওয়া যায় না।
দেশের বাজারের ডিমসংকট ও বাড়তি দামের পরিপ্রেক্ষিতে ৬টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৫১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে গত নভেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মতামত চেয়েছিল প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সম্মতি পাওয়া যায়নি। ডিমও আমদানি হয়নি। সাময়িকভাবে হলেও মানুষের কথা চিন্তা করে ডিম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাজার খুলে দিলেই দাম কমবে।
দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সরকারি নীতি থাকে। কিন্তু সুরক্ষিত বাজার অত্যধিক মুনাফা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। সে কারণেই মানুষকে এখন ১৫ টাকা দিয়ে একটি ডিম কিনতে হচ্ছে। সুরক্ষার হার বা ‘ইফেক্টিভ রেট অব প্রটেকশন’ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তার কথাটিও মাথায় রাখা উচিত।
ভোক্তা বাংলাদেশ নামের সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান এই লেখককে বলছিলেন, সাময়িকভাবে হলেও মানুষের কথা চিন্তা করে ডিম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাজার খুলে দিলেই দাম কমবে।
করপোরেটের বাইরে মুরগির খামার করেন মূলত একটু সচ্ছল কৃষকেরা। ধান আবাদ করেন সব শ্রেণির কৃষক। তাঁদের মধ্যে হতদরিদ্রও রয়েছেন। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা গেলে ডিম কেন, কাদের স্বার্থে আমদানি করা যাবে না, সেটা একটা গভীর প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জনমত জরিপের ফল সরকারি দলের লোকেরা বেশ ফেসবুকে দিচ্ছেন। কারণ, সেখানে সরকারপ্রধানের ‘অ্যাপ্রুভাল রেট’ ৭০ শতাংশ।
জরিপে আরও একটি তথ্য আছে। সেটি হলো, ২০১৪ সালের পর এই প্রথম বেশিসংখ্যক (৫৩ শতাংশ) মানুষ বলেছেন, দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। ‘দেশ ভুল পথে’ যাওয়ার কারণ হিসেবে অর্ধেক মানুষ বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাঁরা এমন ধারণা পোষণ করেন। ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে নেই।
তারপরও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রিদের, সচিবদের, সংস্থাপ্রধানদের কার্যকর উদ্যোগ নেই। সীমাহীন ব্যর্থতার মধ্যেও মন্ত্রী, সচিব ও সংস্থার মহাপরিচালকদের চেয়ারটি কীভাবে তাঁদের সঙ্গে আটকে থাকে, সেটাই শেষ সুগভীর প্রশ্ন।