হাওরাঞ্চলের কথা :: সিলেটে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এর সহয়াতায় চোখের আলো ফিরে পেল ১শ ৭২ চা শ্রমিক। নয়ন ফাউন্ডেশন নামক একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় প্রাথমিক পর্যায়ে দুটি চা বাগানে সার্ভে চালানো হয়। সেখান থেকে ১শ ৭২ চা শ্রমিক নারী—পুরুষ চোখে ছানি পড়া রোগী চিহ্নিত করে তাদের অস্ত্রোপচার হয়। এখন পুরোপুরি সুস্থ রোগীরা। যারা পুনরায় চা পাতি উত্তোলনে নিয়োজিত হয়েছেন। চোখের আলো ফিরে পেয়ে খুশি এই শ্রমিকরা।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া চা বাগানের কোম্পানী বাংলোয় আয়োজিত অরবসি ইন্টারন্যাশনাল ও নয়ন ফাউন্ডেশনের মধ্যে এক ‘সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’ অনুষ্ঠানে চা শ্রমিকরা তাদের চোখে আলো ফিরে পাওয়ার অনুভুতি ব্যক্ত করেন।
‘সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আর্তমানবতার সেবা নিবেদিত রাগীব রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধমীর্ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রখ্যাত টি—প্লান্টার ড. রাগীব আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, ‘সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. খালেদা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. রুমানা ইসলাম ও অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি ডা. মুনীর আহমেদ, রাগীব রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর সম্পাদক আব্দুল হাই। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: ইকবাল হোসেন। বক্তব্য রাখেন মালনীছড়া চা বাগানের ম্যানেজার মো: আজম আলী। অনুভুতি ব্যক্ত করেন ছানি অপারেশন করে চোখের আলো ফিরে পাওয়া সন্তুষ নায়েক ও মিনতি যাদব। ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে মালনীছড়া ও লাক্কাতুরা চা—বাগানের শ্রমিকদের চক্ষু পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে মালীছড়া চা বাগানে ৮১ জন ও লাক্ষাতুরা চা বাগানের ৮৯ জন চোখে ছানিপড়া চা শ্রমিক রোগীর চোখে অস্ত্রোপাচার করা হয়।
সিলেট টি কোম্পানী এমডি ড. রাগীব আলী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জানান, চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ও নয়ন ফাউন্ডেশন বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে তাদের বুঝিয়ে অপারেশনের জন্য তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর তাদের অপারেশন করে চোখে আলো ফিরিয়ে দেয়াটা ছিলো বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে ড. রাগীব আলীসহ তার বাগানের ব্যবস্থাপকরা সরাসরি উপস্থিত থেকে সহযোগিতাকরেছেন বলে জানান। তিনি অরবিস ও নয়ন ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান।
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বরাবরই ব্যতিক্রম।
‘১৯৮৯ সালের দিকে একবার অরবিসের উড়ন্ত হাসপাতাল বাংলাদেশে এসে আমাদের মতো তরুণ এক দল চিকিৎসককে বিশ্বমানের চক্ষু চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়। সেই থেকে অরবিস এর সাথে যুক্ত। রোগী দেখে সাধারণ সেবার বাইরে একেবারে তৃণমুলের রোগীদের সেবা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে অরবিস। চা শ্রমিকদের মধ্যে সার্ভে শেষে সেবা দেয়া এরই একটি অংশ। তিনি চা শ্রমিকদের সেবা দেয়ার পরিবেশ তৈরী করে দেয়ার জন্য ড. রাগীব আলীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি ডা. মুনীর আহমেদ বলেন, দেশে অন্ধত্ব বরণ রোগীর ৮০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। আর চা শ্রমিকতো দেশের অনেক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। এরজন্য অরবিস ইন্টারন্যাশনাল তাদের নিয়েই কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সেটি সিলেট থেকে শুরু হয়েছে। দুটি বাগানে সার্ভে করা হয়েছে। নয়ন ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বাগানেও এই কার্যক্রম চলবে।
নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ বলেন, নয়ন ফাউন্ডেশন সিলেটে আধুনিক চক্ষু হাসাপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চক্ষু রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। অরবিস এর হয়ে সিলেট অঞ্চলের চক্ষু রোগীদের জন্য কাজ করবে নয়ন ফাউন্ডেশন।