সুনামগঞ্জের মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন রক্তদাতাদের কাছ থেকে এক বছরে ৭০৭ ব্যাগ রক্তের যোগান দিয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ইউনিট। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১ হাজার ৭৪ মানুষকে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দেয়া হয়েছে। শ্রেষ্ঠ রক্তদাতা হিসেবে এক বছরে ৩৯২ ব্যাগ রক্ত একাই যোগান দিয়েছেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমান এমসি কলেজে মাস্টার্স অধ্যয়নরত বাঁধন উপদেষ্টা মোস্তাক আহমেদ তুর্জয়।
বুধবার বেলা ১১টায় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অডিটোরিয়ামে, বাঁধন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ইউনিটের বার্ষিক সাধারণ সভা ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তথ্য ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানান বায়েজিদ আল সামায়ূন। প্রতিবেদনে জানানো হয় ২০২৪ সালে এক বছরে বাঁধনের কাছে মোট রক্তের চাহিদা ছিল ৮৫৭ ব্যাগ। চাহিদার প্রেক্ষিতে ৭০৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে অসুস্থ রোগীদের দিতে সক্ষম হয় তারা। বাঁধনের উৎসাহ ও সহযোগীতায় নতুন ১৫৯ জন রক্তদাতা তৈরি করা হয়েছে।
বাঁধন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ইউনিটের সভাপতিত্বে ফারজানা বেগমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো নাসির উদ্দিনের সঞ্চালনায় বার্ষিক সাধারণ সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিরোদা রানী রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ জমসিদ আলী, শিক্ষক উপদেষ্টা ইভা রায়, জাকির হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাঁধনের উপদেষ্টা ও শিক্ষক আবু সাঈদ, সাংবাদিক সোহানুর রহমান সোহান, মাহমুদুল হাসান।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জামসেদ আলী বলেন, মানুষ যখন মারা যায় ডাক্তার পালস দেখেন। রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া আছে কিনা, যদি রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া থাকে তাহলে ধরে নেওয়া হয় তিনি জীবিত আছেন। রক্তের সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে মানে আত্মা চলে গেছে। এমন একটি বিষয় নিয়ে বাঁধন কাজ করে যা ইবাদতের একটা চরম এবং পরম অংশ হিসেবে আখ্যায়িত হয়। এই যে একটা মহৎ কাজ করে বাঁধন সেটা পরকালের জিন্দেগীতেও পুরস্কৃত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
মূখ আলোচক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিরোদা রানী রায় বলেন, মানুষের মানবতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ধর্ম। মনুষ্যত্বই মানব ধর্ম। আমরা যে যেভাবে বলি না কেন যে যেভাবে বিশ্বাস করে না কেন মানবতার থেকে বড় কিছুই নেই। আপনারা অনেক বড় একটা কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল উপজেলায় বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচির মতো ভালোকাজ বাস্তবায়নে কাজ করবেন আপনারা। বাঁধনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে যা যা সহযোগিতা প্রয়োজন সম্মানিত জেলা প্রশাসকের স্যারের মাধ্যমে আমরা তা করবো।
বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে নতুন কমিটিকে বরণ করেন অতিথিরা। বিদায়ী স্মারক প্রদানের মাধ্যমে বিদায়ী কমিটিকে দেয়া হয় সম্মাননা।
নতুন কমিটিতে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু তাহের হিরনকে সভাপতি ও ওয়েসুর রহমান কে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য সদস্যরা হলেন, জোনাল প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দিন, সহ সভাপতি তাজকিরা হক তাজিন, সহ—সভাপতি তাকবির হোসেন, সহ—সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বায়েজিদ আল সামায়ুন, সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক সানজিদা আক্তার সুমাইয়া , কোষাধ্যক্ষ হারুন মিয়া, দপ্তর সম্পাদক তামান্না আক্তার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পপি সেন, তথ্য ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মৌরিন আক্তার , নির্বাহী সদস্য ইমামুল হক, আকাশ আহমেদ, শাহরিয়ার নাফিজ, তৌহিদুর রহমান শুভ , মেহজাবিন নাহার।
২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে দেশের ৭৫ তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যক্রম শুরু কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠন বাঁধন।